কেক কাটা, র্যালি ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ (ফিন্যান্স, এইচ আর এম, বিএইচটিএম) ১ম ব্যাচের র্যাগ ডে পালিত হয়েছে।
রোববার সকাল ১০টায় বিশ^বিদ্যালয় হল রুমে কেক কাটার মাধ্যমে র্যাগ ডে উদ্বোধন করেন, বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নাজিম উদ্দিন সিদ্দিকী।
একজন শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হলো চরম ও পরম আকাঙ্ক্ষার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার প্রথম দিন থেকেই ক্যাম্পাস, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সে নানারকমের স্বপ্ন বুনতে থাকে। সারা দিন পইপই করে ঘুরে বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, মিছিল-মিটিং করে সময় পার। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় তার কাছে হয়ে ওঠে মমতাময়ী মায়ের মতো আপন। ছুটির দিনগুলোয় বাসায় গেলেও প্রাণের ক্যাম্পাসে তার মন পড়ে থাকে। শুধু ভাবতে থাকে কখন যাব প্রিয় আঙিনাতে।
ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়িথ এভাবে পার হয় জীবনের সব থেকে সেরা দিনগুলো। কখন যে সময় চলে যায় কেউ টের পায় না। চারটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুং করে বেজে ওঠে বিদায়ের ঘণ্টা। শিক্ষাজীবনের সেই মধুময় দিনগুলো বিদায়ী শিক্ষার্থীর পিছু ডাকে। আর মধুময় দিনগুলোর স্মৃতি হৃদয়ের ফ্রেমে বেঁধে রাখতে, স্মরণীয় করে রাখতে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে, সস্নোগানে, রঙে-রূপে এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে র্যাগ-ডে পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
র্যাগ-ডে একটি ইংরেজি প্রবাদ। যার বাংলা অর্থ পড়ালেখা শেষের হৈচৈপূর্ণ দিন। ঘটা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের এ বিদায়ী অনুষ্ঠান পালন করেন নাচ-গান আর হাসি-তামাশার মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে র্যাগ-ডে কি কোনো আনন্দের দিন, নাকি বেদনার?
জানতে চাইলে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী চেনাইন রাখাইন বলেন, র্যাগ-ডেতে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করলেও পরে আনন্দের ঘোর কাটে। মনে হয় মায়ার ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রিয় আঙিনাতে থাকার সময় শেষ।
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রিফাত জহির বলেন, সময়ের স্রোতে ভেসে কখন যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়াই টেরই পাওয়া যায় না। সময়ের হিসাবে চার বছর অত্যন্ত অল্প সময় হলেও চার বছরে জমা হওয়া শত, সহস্র স্মৃতি এদিন মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একেকটা সেকেন্ড যেন একেকটা স্মৃতির ভা-ার।
বিএসটিএম বিভাগের মো. আরিফ বলেন, সময়ের ভেলায় ভেসে আমরা যখন শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি রেখায় দাঁড়াই, তখন র্যাগ-ডে পালন করি। দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জমা হওয়া বর্ণাঢ্য ও স্মৃতিময় ঘটনা এদিন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
র্যাগ-ডে সম্পর্কে বিএসটিএম বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের প্রথম দিন থেকে শুরু করে অজস্র ঘটনা এদিন মনে পড়ে যায়। আসলে নাচ-গান আর ফুর্তি করে র্যাগ-ডে পালন করলেও মনের ভেতরে বেদনা জমা হতে থাকে। মনে হয়, কোনো একটা প্রিয় জিনিস হারাতে যাচ্ছি।
র্যাগ-ডের দিন শিক্ষার্থীরা জমকালো র্যালি বের করেন। এ সময় নেচে-গেয়ে, বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি করে, মুখোশ পরে, রং ছিটিয়ে, সহপাঠীকে পানি ছিটিয়ে আনন্দে উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। র্যালির পর শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের খেলার আয়োজন করেন। খেলাধুলা শেষে তারা দুপুরের খাবার খান। এরপর সবাই মিলে পুরনো ক্লাসরুম যেখানে এতদিন তাদের নিয়মিত ক্লাস হতো, সেখানে গিয়ে নীরবতা পালন করেন। নীরবতা পালন শেষে ফটোসেশন ও র্যাগ-ডের মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় র্যাগ-ডে পালন। এরপর সন্ধ্যার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিনয়, কৌতুক, গান, কোরিওগ্রাফির মধ্য দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। আর অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তে এসে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বস্তুতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ই হলো একজন শিক্ষার্থীর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। আর র্যাগ-ডে পালন করে সে শিক্ষাজীবনের আনুষ্ঠানিক ইতি টানা। প্রকৃতপক্ষে র্যাগ-ডের উপরে আনন্দ-মাতামাতি থাকলেও ভেতরে থাকে গুমোট বেদনা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।