শাহেদ মিজান, সিবিএন:

দেশ ও মানুষের শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কক্সবাজারের তিন দিনের জেলা ইজতেমা। শনিবার দুপুর ১২টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালরনা করেন কাকরাইল মসজিদের আহলে সুরা মাওলানা মোশাররফ। মোনাজাতে অংশ নেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। সেখানে ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আরো বিপুল লোকজন অংশ নেন।

২৫ মিনিটের আখেরি মোনাজাতে বাংলাদেশ ও এই দেশের মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। শান্তি-শৃঙখলা বজায় রেখে বাংলাদেশেকে একটি ইসলামী খেদমত মুলক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দোয়া কামনা করা হয়। একই সাথে প্রতিটি মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহ-রাসুলের ভালোবাসা ও ইসলামের খেদমত করার মানসিকতা গড়ে দেয়া। প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের সুমহান শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া। প্রতিটি মুসলমানকে আখেরাতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কর্মকা- করার মানসিকতা তৈরি। সকল প্রকার গোনাহ, কুফরী, বেদআত থেকে মুসলমানদের হেফাজত এবং অতীত জীবনের সকল ধরণের গোনাহ মাফ চেয়ে আল্লাহ কাছে ফরিয়াদ জানানো হয়। পাশাপাশি বিশ্বের মুসলিমদের নিরাপত্তার জন্যও দোয়া কামনা করা হয়।

আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে শহরের জেলে পার্ক মাঠ-সংলগ্ন পশ্চিমের ১৭ একর জায়গাজুড়ে শুরু হয় তিনদিন ব্যাপী কক্সবাজার জেলা ইজতেমা। ওই দিন ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মাধ্যমে তিন দিন ব্যাপী এই ইজতেমা শুরু হয়। শুক্রবার ইজতেমার জুমার নামাজ আদায়ের আয়োজন করা হয়। শনিবার দুপুরে আখেরী মোনাজাতের মধ্যে ইজতেমার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। মোনাজাতের পর যোহরের নামাজ আদায় করে ইজতেমা অংশ নেয়া স্থায়ী মুসল্লীরা ইজতেমা স্থল ত্যাগ করেন।

তথ্য মতে, নামাজে স্থায়ী মুসল্লী ছাড়াও কক্সবাজার শহর, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও রামুসহ দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল মুসল্লী অংশ নেন। সব মিলে পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লী ইজতেমায় অংশ নেন। আখেরী মোনাজাতে বিপুল মহিলাও অংশ নেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে বেলা ১১টা থেকে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লীরা ইজতেমা স্থলে আসতে থাকে। মোনাজাত শুরু হওয়ার আগেই ভরে উঠে পুরো ইজতেমাস্থল। সেখানে জায়গা সংকুলান না হলে অনেকে পাশের বালিকা মাদ্রাসা সড়ক ও আশেপাশে বসে পড়ে মোনাজাতে অংশ নেন। নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলো শত শত পুলিশ সদস্য। সব মিলে শান্তিপূর্ণভাবে পরিবেশের মধ্যে ইজতেমার সমাপ্তি হলো।

ইজতেমার আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমায় কক্সবাজার জেলার রামু, চকরিয়া, সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া টেকনাফ, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলার মানুষ ইজতেমায় অংশ নেন। এছাড়াও কক্সবাজারে অবস্থানরত দেশের বিভিন্ন স্থানের তাবলিগ জামাতের লোকজন ও বাংলাদেশ অবস্থানরত ওমান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার তাবলিগ জামাতের লোকজন অংশ নেন।

ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটির জিম্মাদার আতাউল করিম জানান, ইজতেমায় মুসল্লীদের প্রয়োজন মাফিক সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার জন্য বসানো হয় ৬’শ টয়লেট, শতাধিক নলকূপ, সাতটি বিশাল আকারের ওজুখানা, পানির জন্য ২২টি মটর। মুসল্লীদের খেদমতের জন্য ইজতেমার কর্তৃপক্ষের এক হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। নিরাপত্তার জেলা পুলিশের সাড়ে তিন’শ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে।

ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটির জিম্মাদার আতাউল করিম বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি আর নৈকট্য লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ইজতেমায় শরিক হন। আজ শনিবার আখেরি মোনাজাতে আমাদের লক্ষ্য করা রেকর্ড পরিমাণ মুসল্লী সমবেত হন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ইজতেমা ও মুসল্লীদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা নেওয়া হয়। সেই সাথে সব ধরণের গোপনীয় নাশকতার আশঙ্কা ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারী জোরদার করা হয়।