ডেস্ক নিউজ:
আনিসুল হক— স্বপ্ন, সাহস ও অনুপ্রেরণার এক নাম। তিনি ছিলেন একাধারে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক। মেয়র হিসেবে এই মানুষটা স্বপ্ন দেখেছেন নগর ও নগরবাসীকে নিয়ে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেলো।
২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নাগরিকবান্ধব কিছু উদ্যোগ নেন আনিসুল হক। এর মধ্যে অন্যতম তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে ফার্মগেটের রেলগেট পর্যন্ত সড়ক থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর অভিযানও চালনো হয়। তখন কিছু বাস মালিক তাকে অবরুদ্ধ করে। তবে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে তিনি সফল হন। পরে ওই সড়কটির আধুনিকায়ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সড়কের আইল্যান্ডে লাগিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন গাছ। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি এ সড়কটি কারপার্কিং ঘোষণা করেন আনিসুল হক।
কাজের মান নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ভুঁইফোড় ঠিকাদারদের প্রশ্রয় দিতেন না আনিসুল হক। সেইসব ঠিকাদাররা বিভিন্ন সময় মেয়রের নানা জনবান্ধব কাজে বাধাও দিতেন। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটেননি মেয়র। পেশাদার ঠিকাদার ছাড়া অন্যদের নগরভবনে ঘোরাঘুরি নিষিদ্ধ করেন তিনি।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে কাঁচাবাজার সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন মেয়র। এজন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন তিনি। ব্যবসায়ীরাও তার এ উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দেন।
এ বছরের ১৮ মে নারীদের কেনাকাটার জন্য মহাখালীতে একটি উইমেনস হলিডে মার্কেট উদ্বোধন করেন আনিসুল হক। এর অংশ হিসেবে প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তার জন্য কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা করে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থার ঘোষণা দেন তিনি।
পরিচ্ছন্নতা কাজে গতি বাড়াতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেন ডিএনসিসি মেয়র। পরিচ্ছন্নতা কাজসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে তিনি প্রায়ই ভোরে, কখনও কখনও গভীর রাতে ঝটিকা অভিযানে বের হতেন। অনেক আগে সড়কে এলইডি বাতি সংযোজনের পরিকল্পনা করেছিলেন আনিসুল হক। এজন্য বড় একটি প্রকল্পও হাতে নেন।
এছাড়া মেয়র হিসেবে আনিসুল হকের অন্যান্য কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল— আমিন বাজার থেকে শ্যামলী সড়ক পার্কিং ফ্রি ঘোষণা, হয়রানি রোধে ঠিকাদারদের বিল অফিসে পৌঁছে দেওয়া, সড়কে সাড়ে চার হাজার আধুনিক বাস সার্ভিস চালু, ২২টি ইউলুপ নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, ২০ হাজার বিলবোর্ড উচ্ছেদ ও পরিকল্পিত বিলবোর্ড স্থাপন, সবুজায়নে ইকো-বাস সার্ভিস চালু, জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ, প্রধান সড়কগুলো রিকশামুক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, কারওয়ান বাজার ডিএনসিসি মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীদের মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তর।
অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ডিএনসিসি মেয়র। ওই সময়েই তার এসব উদ্যোগ থমকে যায়।
আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন আনিসুল হক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে বিটিভিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মুখোমুখি বসিয়ে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন তিনি।
ব্যবসায়ী হিসেবেও আনিসুল হক ছিলেন সফল। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে বিজিএমই-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ও ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি নির্বাচিত হন।
এ বছরের ২৯ জুলাই লন্ডনে যান আনিসুল হক। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ) আক্রান্ত এই গুণীজনের মৃত্যু হলো সেখানেই।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আনিসুল হক। ফলে কাজ দিয়ে তার ইতিহাস গড়ার স্বপ্নটা থমকে গেলো।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।