অনলাইন ডেস্ক :
চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়ার সড়কপথে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। চকরিয়া থেকে দোহাজারী সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট অর্থাৎ প্রতিমিনিটে এক কিলোমিটার। এর কারণ দুই লেনের সড়ক এবং বাঁক কম থাকা। অথচ দোহাজারী সেতু থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত বাকি ৫০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগছে দুই ঘণ্টার বেশি।
এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে কমপক্ষে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। সড়কের দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ যানবাহনের স্ট্যান্ড। সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও স্পিডব্রেকার থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টিসহ বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্ঘটনা।
মহাসড়কের পটিয়ার শান্তির হাট, মুন্সেফ বাজার, থানা মোড়, ডাকবাংলা, বাস স্ট্যান্ড, দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলীতে প্রায়ই যানজট চরম আকার ধারণ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির পটিয়া মইজ্জার টেক, পটিয়া-আনোয়ারা ক্রসিং টেক, মনসার টেক, বাদামতল টেক, পটিয়া পোস্ট অফিস টেক, গৈরালার টেক, আঞ্জুরহাট টেক, পটিয়া পোস্ট অফিস টেক, আদালত গেইট মোড়, থানা মোড় ডাকবাংলা মোড়, কমলমুন্সির হাট টেক মিলে ২০টি পয়েন্টে এবং চন্দনাইশ থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত ২০টির অধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর শাহ্ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে লোহাগাড়া উপজেলা সদর পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার দূরত্বের ২০টি পয়েন্টে সড়কের দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে গাড়ির স্ট্যান্ড, গ্যারেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর ৯টি পয়েন্টে বসে নিয়মিত হাটবাজার। এ অংশের সড়কে ৪৫টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও ২৭টি স্থানে অপরিকল্পিত স্পিডব্রেকার রয়েছে।
ফলে সড়কটিতে রীতিমতো যানজট সৃষ্টিসহ দুর্ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- সিএনজি, মাহেন্দ্র, হাইয়েচ, মাইক্রোসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল এবং দোকানপাট সংশ্লিষ্টদেরকে টাকা দিয়ে দু’পাশে রাখার সুযোগ করে দেয়।
গাড়ির চালকরা জানান, মহাসড়কের দু’পাশে এতবেশি বিভিন্ন দোকানপাট, গাড়ির স্ট্যান্ড ও গ্যারেজ গড়ে উঠেছে এবং সড়কটি এত বেশি আঁকাবাঁকা যে, প্রতিনিয়ত অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টারস্থলে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
আরকান সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এতোবেশি আঁকা-বাঁকা যে, অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। দু’পাশে দোকানপাট গড়ে উঠার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই আছে। দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়কের চার লেনের কাজ শুরু হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো ঠিক করা হবে। সড়কের ফুটপাতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন যান-বাহনের স্ট্যান্ড-গ্যারেজ ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাজ বলে তিনি জানান।
আপদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে বেশ কটি সেতু ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এর মধ্যে মাতামুহুরী ও সাঙ্গু সেতু ১৯৬০ সালে নির্মিত। দুটির একটি বিচ্ছিন্ন হলে কক্সবাজারের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এ বিবেচনায় সরকার অগ্রাধিকার তালিকায় চারটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হলো চকরিয়া মাতামুহুরী সেতু, দোহাজারী সাঙ্গু সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু ও পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৩০৮ কোটি টাকা অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সেতুগুলো নির্মাণে ফিজিবিলিটি স্টাডির পর ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে। সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী নভেম্বর মাসে চার সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হবে। ঠিকাদার নির্বাচনে তিন থেকে চার মাস লাগবে। এর দুই বছরের মধ্যে সেতুগুলো নির্মিত হবে।
কিন্তু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে বাঁকখালী নদীর উপরও একটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সেতু রয়েছে। নতুন এই প্রকল্পে সেটিকে কেন রাখা হয়নি জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ূয়া বলেন, ‘জাইকার প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সড়কপথে সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ানো। তাই সেখানে কক্সবাজার শহরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সড়কটি রামু হয়ে ঘুনধুম ও মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
এক্সপ্রেসওয়েতে যুক্ত হয়নি কক্সবাজার’
ঢাকা-চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলা ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ সড়ক চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে নকশা প্রণীত হয়েছে। ২০১৮ সালেই নির্মাণকাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। সড়কটি চালু হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গাড়িতে মাত্র আড়াই ঘন্টায় যাতায়াত সম্ভব হবে। কিন্তু এই পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়নি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর কক্সবাজারকে। শুধু পর্যটন নয়, কক্সবাজার ঘিরে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এলাকার ট্রাফিক বা পরিবহন ১০০ গুণ বাড়বে।
যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম
পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এ সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে বিলাসবহুল ও সাধারণ যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস, মালবাহী ট্রাক জেলা-উপজেলাগুলোতে যাতায়াতকারী মিনিবাস, অটোরিকসা, টেম্পুসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে।
এ সকল যানবাহনের চালকেরা ট্রাফিক আইন না মেনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে এ সব বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
চালকদের মধ্যে অনেকেই বললেন, এ সড়কে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে, তার অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলোর কারণে ঘটে থাকে। অধিকাংশ সড়ক বাঁকে ট্রাফিক সাইন বা সতর্কতামূলক কোন সাইনবোর্ড না থাকায় দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে বাঁকের কথা চালকদের স্মরণ থাকে না। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা।
তাছাড়া বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে এবং শীতে কুয়াশা পড়লে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয় প্রত্যেকটি বাঁকে। বাঁকগুলোতে সতর্কতা সাইনবোর্ড লাগানো থাকলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা।-সিটিজি টাইমস
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।