আবদুল আজিজ (বাংলা ট্রিবিউন), কক্সবাজার:
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। তারা বলছে, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখনও অভিযানের নামে তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থায় সেখানে এখনও ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গুলি করে হত্যা, নারীদের ধর্ষণসহ ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে। এরপরও বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় রাখাইনে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করলেই মিয়ানমারে ফিরে যাবে। কক্সবাজারের উখিয়ায় ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন মনোভাব জানা গেছে।
নিজ দেশে ফিরে যেতে চান রাখাইনের বুচিদং এলাকা থেকে আসা আছিয়া খাতুন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সমঝোতা সই হয়েছে। আমাদের যদি মিয়ানমারে ফেরত যেতে হয়, তাহলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। তাহলেই আমরা ফিরে যাবো। না হলে নয়। আর নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা বাংলাদেশেই মরবো।’নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা না পেলে নিজ দেশে ফিরে যাবেন না বলে জানালেন উখিয়ার বালুখালী ২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে সম্পদ। সম্প্রতি মাঠের পাকা ধানও কেটে নিয়ে গেছে সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করে মিয়ানমারে ফিরবো? সেখানে গিয়ে আমরা কী খাবো? রাখাইনে আগুনের মধ্যে আমাদের ঠেলে দিলে নিশ্চিত মরে যাবো।’প্রায় একই অবস্থান রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবুনিয়া থেকে আসা ফরিদা বেগমেরও। তার ভাষ্য, ‘আমাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি বিশ্বাস হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারকে ধোঁকা দিচ্ছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের সবাই মিথ্যাবাদী। প্রতি মুহূর্তে মিথ্যা ও প্রতারণা করাই তাদের ধর্ম। আজ এক কথা বলে তো, কাল আরেক কথা বলে।’শর্তসাপেক্ষে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মরিয়ম খাতুন। তার বক্তব্য,‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেসব কিছুর ক্ষতিপূরণ চাই। চাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিত নিরাপত্তা ও নাগরিকত্ব। এসব কিছুর নিশ্চয়তা না দিলে আমরা ফিরবো না।’
মরিয়ম খাতুনের মতো একই অবস্থান জানালেন রোহিঙ্গা যুবক আমান উল্লাহও। তিনি বলেন, ‘যেনতেনভাবে আমাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চাইলে আমরা যাবো না। কারণ এর আগেও মিয়ানমার সরকার আমাদের অনেকবার ফেরত নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, একবারও শর্ত মানেনি।’প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের ইউনিয়ন মিনিস্টার উ চ টিন্ট সোয়ে এতে স্বাক্ষর করেন। তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দ্বিপক্ষীয় ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ দ্রুত শেষ করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনায় সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৬ জন রোহিঙ্গা। এর আগে ২ লাখ ১২ হাজার ৫১৮ জন রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ নতুন-পুরনো মিলিয়ে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৪ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।