সিবিএন ডস্কে:
চলতি বছরের হজ গমনেচ্ছুদের টাকা ও হজযাত্রীদের মোয়াল্লেম সার্ভিস চার্জ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে ২২০টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে। এজেন্সিগুলোর এসব অপকর্মে পবিত্র হজব্রত পালনে ইচ্ছুকদের বিড়ম্বনার পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধ হয় দেশের ভাবমূর্তি। এ কারণে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) থেকে হজ এজেন্সি মালিকদের অভিযোগকারীর সামনে রেখে শুনানি করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত এজেন্সির জামানত ও লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) মো. শরাফত জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২২০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীদের সামনে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি মালিকদের উপস্থিত করে শুনানি হবে। আগামী মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) থেকে শুনানি শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত ১৫ দিন। প্রথম দিন ১০টি এজেন্সিকে ডাকা হয়েছে। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষী এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্ত্রণালয় সূ্ত্রে জানা গেছে, হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে ৯৮টি হজ গমনেচ্ছুদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। হজযাত্রীদের মোয়াল্লেম সার্ভিস চার্জ সৌদি আরবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সৌদি আরবে হাজিদের বাসস্থান ও খাবার সরবরাহ নিয়েও প্রতারণা করেছে তারা। এমনকি বেশ কিছু এজেন্সি ঠিকমতো খাবারও দেয়নি হাজিদের।
হজ পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে আর ফেরত দেয়নি এজেন্সিগুলো, তাদের এই কাজের অর্থ কী? নিশ্চয় টাকা মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্য রয়েছে তাদের। অন্তত ৮৯টি হ্জ এজেন্সির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ২ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোকে কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে। ওই আদেশে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ওই টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, ট্রাভেল নুরানী, মিস ফালাহ ট্রাভেলস, ঢাকা হজ কাফেলা, মাবরুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সানজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। এই এজেন্সিগুলোও মোয়াল্লেম সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করেনি। গুলশানের একটি ট্রাভেলস এজেন্সি চলতি বছর হাজিদের কাছ থেকে জনপ্রতি নেওয়া মোয়াল্লেমদের সার্ভিস চার্জ বাবদ এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় হজ করতে গিয়ে হাজিদের মিনা আরাফাত ও মুজদালিফা যাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ২৮ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিন যেসব এজেন্সিকে শুনানিতে অংশ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে এয়ার বাংলা ইন্টারন্যাশনাল, আকবর ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, আল আমানত ট্রাভেলস, গালফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, শিমন ওভারসিজ এক্সপ্রেস, হারামাইন ট্রাভেলস, তানভীর ট্রাভেলস, এয়ারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স আল-সাফা এয়ার ট্রাভেলস এবং সিটি ট্রাভেলস। পর্যায়ক্রমে ২২০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের শুনানি হবে।