হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
টেকনাফে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানা গেছে। এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশসহ সবই কৃষকের অনূকুলে থাকায় আগের বছরের চাইতে ফলনও ভাল হয়েছে। ফলন ভাল হওয়াতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী ধান উৎপাদন হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় কৃষক-কৃষাণীরা পাকা ধান কেটে আটি বেঁধে নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ মাড়াইয়ের কাজ করছেন। আবার অনেকে কুলা ও ফ্যান দিয়ে ধান পরিস্কারের কাজ করছেন। আবহমান বাংলার কৃষকদের ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসব।
২৫ নভেম্বর টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবছর টেকনাফ উপজেলায় ১০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। তম্মধ্যে হোয়াইক্যংয়ে ৫ হাজার ৩৮০ হেক্টর, হ্নীলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, টেকনাফ সদরে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, সাবরাংয়ে ১ হাজার হেক্টর, বাহারছড়ায় ১হাজার ৪০০ হেক্টর, পৌরসভায় ৫ হেক্টর ও সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নে ৯০ হেক্টরসহ ১০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমি চাষাবাদের কথা থাকলেও বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনে ৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা সম্ভব হয়নি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে ১০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির মধ্যে ৫০ হেক্টরে বিআর-২৩, ৭০০ হেক্টরে ব্রি ধান-৩২, ৩ হাজার ৫০ হেক্টরে ব্রি ধান-৩৩, ২ হাজার ১৫০ হেক্টরে ব্রি ধান-৩৯, ১৮০ হেক্টরে ব্রি ধান-৪০, ১৫০ হেক্টরে ব্রি ধান-৪১, ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৪৯, ১০০ হেক্টরে ব্রি ধান-৫১, ১৪০ হেক্টরে ব্রি ধান-৫২, ২১০ হেক্টরে ব্রি ধান-৫৩, ১৭০ হেক্টরে ব্রি ধান-৫৪, ৫০ হেক্টরে ব্রি ধান-৫৬, ৩০ হেক্টরে ব্রি ধান-৫৭, ৫০০ হেক্টরে বিনা-৭, ২০০ হেক্টরে পাইজামসহ মোট ৯ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে ১৬ প্রকার উফশী জাতের চাষ করা হয়। তাছাড়া ২০ হেক্টরে এরাইজ গোল্ড নামের হাইব্রিড, স্থানীয় জাতের মধ্যে ২০০ হেক্টরে লেম্ব্র, ৪০০ হেক্টরে বিন্নি, ৩০০ হেক্টরে লাল পাইজাম, ২০০ হেক্টরে কালাম পাইজাম জাতের চাষ করা হয়। তবে ব্রি ধান-৩৩ ও ব্রি ধান-৩৯ জাতের ধান চাষে বেশী করতে দেখা গেছে।
টেকনাফ উপজেলায় এবারে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন। উৎপাদন ভাল হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অর্জিত হয়েছে ৩০ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চাউল। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণে কৃষকরা জমিতে চারা রোপন করে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটে। অন্য মৌসুমের তুলনায় এবছর কার্তিক মাসের শুরুতেই ধান কাটার রীতিমত ধুম পড়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগের তুলনায় ধানের ফলন ভালই হয়েছে। এবারে তারা ধান ক্ষেতে অতিরিক্ত পার্সিং করায় কম খরচে ধানের ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারছেন। পাশাপাশি এ পদ্ধতি অনুসরণ করায় পোকা মাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না হওয়ায় বাড়তি খরচ হয়নি। এতে কৃষকের যেমনি টাকা সাশ্রয় হয়েছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা বেশী ধান হাসিমুখে ঘরে তুলতে পেরেছেন। এবছর হাইব্রিড প্রজাতির এরাইজ গোল্ড জাতের ধান প্রতি ৪০ শতক জমিতে ১০০ আড়ি (১৪ কেজিতে ১ আড়ি)।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শফিউল আলম কুতুবী জানান কৃষকরা জমিতে পার্সিং পদ্ধতি করাতে ফলন বেশী হয়েছে। কৃষি উদ্ভাবনীয় আধুনিক পদ্ধতিতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। অন্যদিকে বিষ প্রয়োগ না করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে। তাছাড়া কৃষি উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী মৌসুম থেকে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের মাধ্যমে ফলন আরো বেশী বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন ‘চলতি সনে সারের সংকট না থাকায় কৃষকরা সুষম সারের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জমিতে সার প্রয়োগ, আবহাওয়া অনুকূল, আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আলোক ফাঁদ, পার্সিং ও লাইনিং পদ্ধতি কৃষকরা অনুসরণ করাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী ফলন হয়েছে। আগামীতে কৃষকদের মাঝে আরো বেশী আলোক ফাঁদ, পার্সিং, লাইনিংসহ বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি অনুসরণ নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে’।
এদিকে ২৫ নভেম্বর টেকনাফ সদর ব্লকের শীলবনিয়াপাড়া কৃষক মোঃ রফিকের চাষাবাদ করা ব্রীধান-৪৯ জাতের ধান কাটা হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ জাকারিয়া জাকু এবং টেকনাফ উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের জুনিয়র পরিসংখ্যান সহকারী জুয়েল চন্দ্র দেব উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নেই ৭১০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৮৪০ জন কৃষক লবণাক্ত সহনশীল বিনা-৭, ব্রীধান-৩৯, ব্রীধান-৫৯, ব্রীধান-৪০, ব্রীধান-৪১, ব্রীধান-৫৩, ব্রীধান-৫৪ জাতের ধানের চাষাবাদ করেছেন। তম্মধ্যে লবণাক্ততা সহনশীল, খরা সহনশীল এবং জোয়ার-ভাটা সহনশীল জাত রয়েছে। ৩০ জন কৃষককে ৩০টি লবণাক্ততা সহনশীল প্রদর্শণী দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে চলতি মৌসুমে ১০ হেক্টর জমিতে আদা, ৩০ হেক্টর জমিতে হলুদ, ২৫ হেক্টর জমিতে চড়া কচু, ১০ হেক্টর জমিতে পাইন্যা কচু, ২০ হেক্টর জমিতে কলমী শাক, ২৫ হেক্টর জমিতে পাট শাক, ২০ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া, ২০০ হেক্টর জমিতে পান, ১৮ হেক্টর জমিতে বরবটি, ১৫ হেক্টর জমিতে ঢ়েড়স, ১০ হেক্টর জমিতে লাউ, ১০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোল, ৩৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ, ১০ হেক্টর জমিতে টমেটো, ১৫ হেক্টর জমিতে বেগুন, ১২ হেক্টর জমিতে পুঁইশাক, ৮ হেক্টর জমিতে ডাটা, ৪০ হেক্টর জমিতে শশা, ২৫ হেক্টর জমিতে চিচিংগা, ২০ হেক্টর জমিতে ঝিঙ্গে, ১৩০ হেক্টর জমিতে ফেলন, ১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্রা, ৩০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি, ২০ হেক্টর জমিতে পিয়াঁজ, ১৫০ হেক্টর জমিতে আলু, ৩০০ হেক্টর জমিতে শাকসব্জি, ২০ হেক্টর জমিতে কলা, ৫০০ হেক্টর জমিতে পান, ৩ হেক্টর জমিতে পেঁপেঁ, ২ হেক্টর জমিতে আখ, ১২০ হেক্টর জমিতে অন্যান্য শাকসব্জির চাষাবাদ করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।