শাহেদ মিজান, সিবিএন:
রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশাসনের ভেতর চাপ বেড়েই চলছে। বিপুল রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেয়ারও পরও রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত থাকায় চাপ দিনকে দিন বেড়ে চলছে। এতে প্রশাসনে নানা প্রতিবন্ধকতা ও ঘাটতি হচ্ছে। এতে জেলা প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। সেই সাথে রোহিঙ্গাদের রক্ষণাবেক্ষণেও নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হিমশিমও খেতে হচ্ছে। তারপরও হাল ছাড়ছে না প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলা করে যাবেন। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
জেলা প্রশাসনের সূত্র মতে, মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসা এখনো থামেনি। প্রতিদিনি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট নতুন ভাবে রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত রয়েছে। এতে নানাভাবে সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বাসস্থানের ক্ষেত্রে চরম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা নির্ধারিত জায়গাতে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হওয়া সংকুলান হচ্ছে না। তাই নতুন করে জায়গা বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু আশেপাশের সেই রকম উপযোগী জায়গা প্রয়োজন অনুসারে মিলছে না। তারপরও প্রশাসনকে মরিয়া হয়ে জায়গা খোঁজতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুনভাবে আরো জায়গা নেয়া হয়েছে। একই ভাবে খাদ্যা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ সার্বিক কার্যক্রমেরও পরিধি বাড়াতে হচ্ছে।
সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া ও টেকনাফে ৩ হাজার একর সরকারি জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই জমিতে ১২ টি ক্যাম্প করে ২০ টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। অনেক আগেই এসব জমি রোহিঙ্গা বাসস্থানে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অন্যদিকে প্রতিদিনই ঘটছে অনুপ্রবেশ। ফলে নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। এই বাধ্য হয়ে নতুন জায়গরা বরাদ্দ করতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনকে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এখন পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় বাসস্থানের সংকট স্থায়ী হবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বাড়তি রোহিঙ্গাদের সামলাতে প্রশাসনকে অনেক বেগ পোহাতে হবে। সেই অন্যান্য সেক্টরকেও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকরা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে কোন রোগ যেন বাংলাদেশে না আসে এবং ছড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে উখিয়া ও টেকনাফে ৪১টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের দেওয়া হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা সেবাও। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ জনকে হাম র”বেলোর টিকা, ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৮ জনকে ওপিভি টিকা, ৮ লাখ ৮৩ হাজার ১১৫ জনকে কলেরার টিকা দেওয়ার পাশাপাশি ১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৬ জনকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুস সালাম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা লোকগুলো অধিকাংশই নানাভাবে অসুস্থ। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ অপুষ্টিতে ভুগছেন। অসুস্থ সব রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ রোগির চিকিৎসা দিতে গিয়ে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য সেবার সংস্থাগুলোকে অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে বলেন, ‘উখিয়া টেকনাফসহ যেখানে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে সেখানে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওই এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী। পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার জন্য আমাদের লোকজনকে দিনরাত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তারপরও পরিস্থিতি আরো ভালো করার জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘এখনো রোহিঙ্গারা আসছে। আমরা এখনো বলতে পারছি না মিয়ানমার থেকে আরো কত রোহিঙ্গা আসবে। রোহিঙ্গারা আসতে থাকায় তাদের ঠাঁই দিতে নির্ধারিত জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। এতে চাপও বেড়ে চলছে। তাই আশে পাশে আরো জায়গা দেখছি। সেখানে বাড়তি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হবে।’

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের রিপোর্ট মতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা বাড়ছে।