বাঙ্ক বেডের নিচের তলায় প্রায় ১০ বছর ধরে লি সো ইয়নকে ঘুমাতে হয়েছে। ২৪ জনের বেশি নারী তার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমাতো। নিজেদের পোশাক রাখার জন্য প্রত্যেক নারীর থাকতো ছোটো একটি করে ড্রয়ার।
এক দশকেরও বেশি আগের ঘটনা এটি। পালিয়ে এসেও কংক্রিট ব্যারাকের সেই গন্ধের স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি। তিনি জানান, ‘আমরা প্রচণ্ডভাবে ঘেমে যেতাম। ধানের তুষের (খোসা) তৈরি গদির ওপর আমরা শুয়ে থাকতাম। সে কারণে গায়ের ঘাম সেখানে বসে যেত। সেটাতে তুলা ছিল না। ফলে তুষের গন্ধ আর ঘামের গন্ধ মিলে বিচ্ছিরি একটা গন্ধ তৈরি হতো। সেটা ভালো লাগতো না।’
আর সেই পরিস্থিতি তৈরি হতো কাপড় পরিষ্কার করার কোনো উপায় না থাকার ফলে। তিনি আরও জানান, একজন নারীর জন্য সব থেকে বড় সমস্যা হলো, সেখানে আমরা ঠিকমতো গোসলও করতে পারতাম না। কারণ সেখানে গরম কোনো পানির ব্যবস্থা নেই।
লি জানান, ‘পাহাড়ের ঝরনার সঙ্গে সেট করে দেয়া এক পাইপের মাধ্যমে পানি আসতো আর তা দিয়েই গোসল সারতে হতো। সেই পাইপ দিয়ে সাপ, ব্যাঙও আসতো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ৪১ বছর বয়সী লি সো ইয়নের বাবা। উত্তর কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবারের অনেক সদস্য সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন।
১৯৯০ সালের দিকে দুর্ভিক্ষের কারণে স্ব-প্রণোদিত হয়ে সেনাবিাহিনীতে যোগ দেন তিনি। তার মতো হাজার হাজার তরুণী সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।
তিনি আরও জানান, ‘দুর্ভিক্ষের কারণে উত্তর কোরিয়াতে নারীদের দুঃসময় বয়ে আসে। বহু নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন, অনেকের সঙ্গেই চলতে থাকে খারাপ আচরণ। অনেক নারী হয়রানি এমনকি যৌন সহিংসতার শিকারও হয়েছে।’
নারী-পুরুষ সবারই দৈনন্দিন রুটিন প্রায় এক রকমই ছিল। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রশিক্ষণের সময় ছিল কম। পুরুষদের আবার কাপড় কাঁচা কিংবা রান্না করা না লাগলেও নারীদের করতে হতো।
নারী সৈনিকরা মাসিক না হওয়ার কারণে খুশি বলেও জানান তিনি। কারণ, ওই পরিস্থিতিতে মাসিক হলে তাদের দুর্গতি আরও বাড়তো। ঋতুস্রাবের সময় পার করার মতো তাদের তেমন কোনো সুব্যবস্থাও ছিল না। একজনের ব্যবহার করা স্যানিটারি প্যাড আরেকজনকে ব্যবহার করতে হতো।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী সৈনিকদের আলাদা শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি। পুরুষ সহকর্মীদের সামনেই অনেককেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়।
কাজের সময়ের বাইরেও তাদের ঘরে কমান্ডাররা বসে থাকতেন এবং অধীনস্থ কোনো নারী সেনাকে সেখানেই ধর্ষণ করতেন। দক্ষিণ কোরিয়াতে ২০০৮ সালে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন লি।
প্রথমবার চীনের সীমান্তের কাছে ধরা পড়ে যান তিনি। এক বছর ধরে বন্দি থাকার পর দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তুমেন নদী সাঁতরে পার হয়ে চীনের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি। পরে দালালের মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারেন।
সূত্র : বিবিসি
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।