ডেস্ক নিউজ:
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুতেই হাজার বছরের বাঙালিয়ানার শিল্প সংস্কৃতি ধরা পড়ে আলাদা আলাদাভাবে। বাঙালি সংস্কৃতি, কৃষ্টি এ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে ঘনিষ্ঠভাবে। তাইতে বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতি বুকে ধারণ ও লালন পালন করে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ঋতুবৈচিত্র্যে হেমন্তের আগমন ঘটে শীতকে সাথে নিয়েই। বাতাসের সাথে হালকা ঠাণ্ডা আর কুয়াশার চাদর বুকে জড়িয়ে হেমন্ত আসে শীতের পরশ মেখে। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। অগ্রহায়ণে শুরু হয় ধান কাটার মহোৎসব। এ সময় ফসলের ক্ষেত ভরে উঠে সোনালি ধানের হাসিতে। সেই সাথে কৃষকের মুখেও হাসি ফোটে সোনালি ফসল ঘরে ওঠার আনন্দে। নতুন ধানের ম ম গন্ধে সুবাসিত হয় চার পাশ।
নতুন ধান ঘরে আসার পর চালের তৈরি পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। প্রতিটি ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। বাঙালির ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের হৈচৈ পড়ে যায়। চিরাচরিত এই উৎসব আমাদেরর সংস্কৃতির অংশ।
ফসল ফলানোর জন্য কৃষক যেমন ফসলের ক্ষেতে বিরামহীন কাজ করে ক্ষেতে সোনার ফসল ফলান আর উৎপন্ন ধান ঘরের গোলায় উঠানোর জন্য কৃষকের যে ব্যবস্থা তার সফল অংশীদার আমাদের দেশের প্রতিটি নারী। প্রতিটি কাজে নারী প্রেরণা হিসেবে উৎসাহ জুগিয়েছে। সারা বছরের ফসল ঘরে তোলার আনুষঙ্গিক যে কাজগুলো নারী তার নিজের বুদ্ধিমত্তা যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে করেন। যার ফলে সময় মতোই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়।
কৃষক জমি থেকে ধান কাটার পর মাড়াই থেকে শুরু ধান ঝাড়া উড়ানো, শুকনো ও পিঠাপুলি তৈরির জন্য প্রস্তুত করা নারীর কোমল হাতের স্পর্শেই হয়ে থাকে। প্রতিটি কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার পরই পূর্ণতা পায় নবান্ন উৎসবে।
একসময় ঢেঁকিতে ধান ভানা হতো আর সেই চাল দিয়ে খাওয়ার কাজ চলত। এখন আমাদের দেশে এখনো ঢেঁকির প্রচল আছে। এ কাজ মূলত নারীদের। এ কাজে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে সহযোগিতা করত। খুব বেশি দিনের কথা নয়, ঢেঁকিতে ধান ভানার গান ভেসে বেড়াত বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। অবশ্য যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকির শব্দ খুব একটা শোনা যায় না। তার পরও নতুন চালের ভাত মুখে দেয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশে।
সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি নবান্ন উৎসবকে ঘিরে প্রতিটি ঘরে তৈরি করা হয় নানা স্বাদের পিঠাপুলি। এসব পিঠার মধ্যে বাংলার আবহমান কাল থেকে প্রচলিত ভাপা পিঠা, পাকন পিঠা, মুখসালা, পাটিসাপটা, ক্ষীর, পায়েস ইত্যাদি। তৈরি করা হয় নারকেলের নাড়– আর নতুন চাল দিয়ে ভাজা হয় মুড়ি ও খৈই। নানা স্বাদের খাবার তৈরি নিয়ে মহল্লায় মহল্লায় সৃষ্টি হয় ভিন্ন মাত্রার আমেজ।। যা দেখে মুগ্ধ হয় নবীন প্রবীণ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরেরা।
নবান্ন উৎসব কেবল গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শহরেও ভিন্ন মাত্রায় আয়োজন করা হয় নবান্ন উৎসবের। গানে গানে অগ্রহায়ণের প্রথম দিনকে বরণ করার দৃশ্য ইটপাথরের ঘেরা মানুষদের উপভোগ্য করে তুলছে। এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, মিষ্টি, সন্দেশ, মণ্ডা-মিঠাইসহ দেশীয় সংস্কৃতির জিসিনপত্র পাওয়া যায়। মেলাগুলোতে দেশীয় স্বাদে পরিবেশন করা হয় পিঠা পায়েসের। যেখানে নারীদের বিশেষ অবদান চোখে পড়ে। স্টলগুলোতে চোখে পড়ে নারীদের গ্রামীণ সাজপোশাকে। নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। আর পিঠাপুলির উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয় সবাই।