ডেস্ক নিউজ:
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অনেক পরে হলেও অস্ত্র বিরতিসহ চীনের ৩ দফা প্রস্তাবে কিছুটা স্বস্তিতে বাংলাদেশ। যদিও চীনের এই প্রস্তাব স্পষ্ট নয়। তবে এই প্রস্তাবের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও চীনের প্রস্তাব স্পষ্ট নয়। তারপরও তাদের প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। অনেক পরে হলেও চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সোমবার নেপিড’তে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তিন দফা পরিকল্পনার প্রস্তাব করেন।
প্রথমত: রাখাইনে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করতে হবে, যাতে সেখানে শৃঙ্খলা আর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয় এবং মানুষকে আর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে না হয়।
দ্বিতীয়ত: অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ তৈরি হয়।
তৃতীয়ত: রোহিঙ্গা সংকটে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে। যেখানে দারিদ্র্যবিমোচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে। সেখানেই সমাধান খুঁজতে হবে। রাখাইন সহিংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন করতে হবে। আর প্রত্যাবাসনে চীনের তিন প্রস্তাব ভূমিকা রাখবে। তাদের প্রস্তাব কিছুটা হলেও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘চীনের প্রস্তাবটা যদিও স্পষ্ট না। তারপর চীন এ বিষয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করে সমাধানের কথা বলছে। পাশাপাশি চীন এ ইস্যুতে আগ্রহ প্রকাশ করছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীনের ভূমিকা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘চীনের এ তিন প্রস্তাবের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা পুরোপুরি সমাধানের কথা আসেনি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক। চীনের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক অনেক ভাল। বাংলাদেশের সাথেও ভাল। এতো দিন দেশটি দোটানার মধ্যে ছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে এটাও বেশ ইতিবাচক। এই প্রস্তাবটির উপর নির্ভর করে যদি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ দেয়া যায় তাহলে হয়তো এই সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বর্তমান যে অবস্থা সেটা পরিবর্তন কারা খুবই জরুরি। আর এটা পরিবর্তনে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন এই কূটনৈতিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, একটা পরিবর্তন আমরা লক্ষ করছি। কারণ সবাই বলছিল চীন বিরোধীতা করছে, সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে চীন এ বিষয়ে এখন যথেষ্ট সচেতন। এখন মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একেবারে মূলে যাওয়া যাচ্ছে। মূলে গিয়েই যেন সমস্যাটার সমাধান হয় সেই দিকেই নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, চীনের বর্তমান ভূমিকা যথেষ্ট ইতিবাচক। এখন দেখা বিষয় এটা কতটা ভূমিকা পালন করতে পারে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি চীন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শুরু হয় সেনা অভিযান। অভিযান শুরু হলে হত্যা, গণধর্ষণ, নির্যাতন থেকে বাঁচতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিগত নিধনে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় উগ্রবাদী বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীও। আক্রান্ত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাঁচাতে ও আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত খুলে দেয় এবং তাদের পাশে দাঁড়ায়।- পরিবর্তন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।