বাংলাট্রিবিউন:
ইসি-বিএনপিএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে ৩ ক্যাটাগরিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। বাকি ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে চায় দলটি। তবে নির্বাচনি আসন নিয়ে খালেদা জিয়া এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় সবকিছু নাও ঠিক থাকতে পারে। এক্ষেত্রে মনোনয়নের ক্যাটাগরি ঠিক থাকলেও প্রার্থী চূড়ান্তকরণ আলোচনা ও পর্যবেক্ষণের পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপির নির্বাচনি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে একটি প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করে দলটি। ওই তালিকা থেকে আগে ২০০ জনকে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর বাকি ১০০ আসনে ভিন্ন-প্রক্রিয়ায় প্রার্থী দেবে দলটি।
এই তিন ক্যাটাগরির প্রথমটি হচ্ছে, ২০ দলীয় জোট ও জোটের শরিকদের মধ্যে কয়েকটি আসন বণ্টন করা হবে। এক্ষেত্রে জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যদের আসন দেওয়া হবে। জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া হবে ত্রিশ থেকে চল্লিশ আসন। এই আসনসংখ্যা কমতেও পারে। এখানে লক্ষণীয়, গত ১৫ নভেম্বর রাতে জোটের সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন নেতার প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, ‘আসন নিয়ে এখনপর্যন্ত কোনও বৈঠক হয়নি। এগুলো আরও পরে করা হবে।’
দ্বিতীয়ত, সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিকল্প ধারা, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কয়েকটি বামপন্থী দল রয়েছে। এই দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যেসব স্থানে নির্বাচন করবেন, সে স্থানগুলোয় বিএনপি প্রার্থী দেবে না। চূড়ান্ত অর্থে আলোচনা না হওয়ায় সমঝোতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণেই আটকে আছে।
তৃতীয় ক্যাটাগরি হলো, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যারা সংস্কারপন্থী ছিলেন এবং গত আট বছরে পেশাজীবীদের মধ্যে যারা খালেদা জিয়া ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত কয়েকজনকে জন্য মনোনীত করা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির মনোনয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এক নেতার ভাষ্য, ‘বেশ কিছু আসনে গত ১৫ বছরে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষকদের অনেকেই রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, কোনও সুনির্দিষ্ট দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন, এমন কয়েকজনকে হায়ার করা হতে পারে।’
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে কার্যক্রমে যুক্ত একনেতা জানান, ‘জামায়াত নির্বাচনের আগে দলীয় প্রতীক ফিরে পেলে বিএনপির ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তৈরি হবে রহস্যও। যদি না পায়, তাহলে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী দিতে হবে দলটিকে। এক্ষেত্রে জামায়াতের আসনবণ্টন জোটগতভাবে হলে সংশ্লিষ্ট আসনগুলোয় ধানের শীষের প্রতীকে কেউ প্রার্থী হবেন না।
জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকা দলীয় প্রতীক ফিরে না এলে ধানের শীষে নির্বাচন করার একটি প্রাথমিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দলের নীতি-নির্ধারকরা ধানের শীষকে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে এগিয়ে রাখছেন। আর এ বিষয়টির একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে গত ১৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে দেওয়া প্রস্তাবনায়।
দলের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইসিতে দেওয়া প্রস্তাবে বলেছেন, ‘‘বিদ্যমান আইনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান ছাড়াও এরসঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও অন-লাইনে দাখিলের বিধান করতে হবে। মনোনয়নপত্র ফরম-১ সংশোধন করতে হবে। ‘রাজনৈতিক দলের প্রার্থী’ শব্দগুচ্ছের জায়গায় ‘রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী শব্দগুচ্ছ’ প্রতিস্থাপন করতে হবে।’’
যদিও এ বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের কোনও নেতাই মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, ‘নির্বাচনের আরও অনেক দেরি। এরই মধ্যে পরিস্থিতির নানা পরিবর্তন ঘটবে। কোন প্রতীকে নির্বাচন হবে, তা ঠিক করার আগে, ঠিক করতে হবে নির্বাচন হবে কোন ব্যবস্থাপনায়।’
বিএনপির তিন ক্যাটাগরিতে মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোন পন্থায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে, এটা বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড ঠিক করবে। ফলে, এখনই এই বিষয়ে বলার সুযোগ নেই।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।