ইমরান হোসাইন, পেকুয়া:

হামিম মোহাম্মদ ফাহিম। পেকুয়া সদরের শেখেরকিল্লা ঘোনা এলাকার জেএম শাহাবুদ্দিনের ছেলে সে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন শখের বশে শুরু করেন কবুতর পালন। যা পরবর্তী সময়ে তার নেশায় পরিণত হয়। দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের কবুতর পালনে সুপরিচিত মুখ হয়ে উঠেন পুরো কক্সবাজার জেলাজুড়ে। সময়ের ব্যবধানে বিস্তৃত হতে থাকে তার পাখি পালন। নিজের বাড়ীতেই গড়ে তুলেন খামার। আট বছরের ব্যবধানে হয়ে উঠেন পুরোদস্তর খামারি। দেখতে শুরু করেন লাভের মুখ। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে আমেরিকান হ্যালমেট, ফিলবেক, করমুনা, সেকশন ফ্রিজ, পান্টিল, ব্লাস্ট, সু-কিংসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১২০জোড়া দামী কবুতর। এছাড়াও দেশি-বিদেশী মুরগির কাকানাত, বনমুরগ, টিয়া ও ঘুঘু পাখি রয়েছে তার সংগ্রহশালায়। তার পালিত কবুতর বিভিন্ন সময় প্রদর্শিত হয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাটেনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদর্শনীতে।

চট্টগ্রাম হাজেরা তজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাশ করা ফাহিমের সফলতা দেখে এ কাজে উৎসাহিত হয়েছেন অনেক তরুণ ও যুবক। তবে সফল এই তরুণ খামারি জানান ভিন্ন কথা, তার অভিযোগ স্থানীয় প্রাণি সম্পদ অফিসের অসহযোগিতায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। মারা গেছে তার ৪০জোড়া কবুতর।

গত দুইসপ্তাহ আগে অজ্ঞাত রোগ আক্রমণ করে তার কবুতর খামারে। প্রথমে মারা পড়ে দুইজোড়া কবুতর। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তা সারাতে না পেরে খুব আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। পরে যখন আরো কবুতর মারা যায়, তিনি ছুটেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কিন্তু না ! সেখান থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা আদায় করতে পারেনি সে। কারণ কর্তাবাবুরা অনুপস্থিত ! তাদের অফিসে খালি পড়ে থাকা চেয়ার টেবিল গুলো বলে দিচ্ছে এখানে কেউ বসার কথা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে চেয়ার টেবিল গুলো ফাঁকা।

দিন যায়। কবুতর মরে। কিন্তু কর্মকর্তাদের দেখা মেলেনা। কার্যালয়ে একক্ষ ওকক্ষ ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় আরো তিনদিন। এরমধ্যে মারা যায় আরো ১০জোড়া কবুতর। দিকভ্রান্ত হয়ে সে ছুটতে থাকেন পেশাদার বিভিন্ন খামারির দ্বারে। তাদের পরামর্শে নিজেই চালান চিকিৎসা। কিন্তু কবুতরের মৃত্যু কিছুটা প্রতিহত করা গেলেও ব্যর্থ রোগ প্রতিরোধে। শেষপর্যন্ত মারা যায় তার চল্লিশ জোড়া কবুতর। এতে তার অন্তত দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এব্যাপারে তরুণ খামারি হামিম মোহাম্মদ ফাহিম বলেন, গত সপ্তাহের পাঁচদিন(রবি-বৃহস্পতিবার) এবং চলতি সপ্তাহের তিনদিন(রবি-মঙ্গলবার) পর্যন্ত মোট আটদিন পেকুয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকালবিকাল চল্লিশ বারেরও বেশিবার গিয়ে দেখা পাইনি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এ এম খালেকুজ্জামান ও ভেটেনারি সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছের। এখন পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেল কবুতরগুলো আক্রান্ত হওয়া রোগের নাম। সুচিকিৎসা তো দূরে কথা। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে থাকা অপর কোন কর্মকর্তা কর্মচারী এব্যাপারে আমাকে কোন সহযোগিতা করেনি।

তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেকুয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে কোন কর্মকর্তার দেখা পায়নি এই প্রতিবেদক। মঙ্গলবার (২১নভেম্বর) দুপুরে কার্যালয়ে দেখা মেলে মাঠ সহকারী (কৃত্রিম প্রজনন) আনোয়ারুল কবির ও মিশ্রণকারী ফরিদুল আলমের। তারা তরুণ খামারি ফাহিমের অভিযোগের ব্যাপারে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেনারি সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, গত কিছুদিন আমি জেএসসি পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করেছি। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে পরিবারসহ আমি বেড়াতে আসি। এরমধ্যে কেউ আমাকে না পেলে আমার করার কিছু নেই। আমি তো শুধুমাত্র তার (ফাহিমের) সমস্যা দেখার জন্য বসে থাকতে পারিনা।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, পেকুয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে যথেষ্ট জনবল ও প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা দিয়েছেন সরকার। কিন্তু কর্মকর্তাদের অবহেলা, দায়িত্বহীনতায় ও অনুপস্থিতর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার প্রাণি সম্পদ।

পেকুয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এ এম খালেকুজ্জামান বলেন, পরীক্ষার ডিউটির কারণে ভেটেনারি সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ কিছুদিন ঠিকমত অফিস করতে পারেনি। সেটা সত্য। এরপরে ছুটি নিয়ে তিনি গত বৃহস্পতিবার ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে গেছেন। ভোক্তভুগী তরুণ খামারী ফাহিম গত আটদিন আপনাকে কেন অফিসে পাননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অফিসের কাজে সকালে কক্সবাজার এসেছি। তবে নিয়মিত অফিস করি। আমাকে কেন পাবেনা ? প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনা সত্য হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।