একই নাম্বারের ২টি মোটর সাইকেল
হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ
টেকনাফে মোটর সাইকেলের নাম্বার প্লেট পাল্টে ইয়াবা পাচার করার গুরুতর ও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এধরণের একটি ঘটনা ফাঁস হওয়ায় টেকনাফ সীমান্তে তোলপাড় চলছে। একই নাম্বারের ২টি মোটর সাইকেল নিয়ে প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। এদিকে মোটর সাইকেলের বৈধ কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টধারী গাড়ির প্রকৃত মালিক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বলে জানা গেছে। ইঞ্জিন নাম্বার এবং চেচিস নাম্বার ভিন্ন হলেও একই নাম্বারের ২টি মোটর সাইকেলের ১টি বিজিবির হাতে ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে টেকনাফ মডেল থানা হেফাজতে, আরেকটি টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ব্যবহার করছেন।
জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের পানছড়ি পাড়ায় ইয়াবাসহ মোটর সাইকেল আটকের ঘটনায় রহস্যের সুত্রপাত। এঘটনায় ১টি মোটর সাইকেল জব্দ এবং সাবরাং বিওপির নায়েব সুবেদার মোঃ আতিকুর রহমান বাদী হয়ে ইয়াবা পরিবহনের অভিযোগে সাবরাং পানছড়িপাড়া মোঃ আলী প্রকাশ আলুগোলার পুত্র মোঃ সামছুল আলমকে (২৫) পলাতক আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা (নং-২১) দায়ের করেন। ইয়াবাসহ আটক মোটর সাইকেলটির বিবরণ হচ্ছে ১৫০ সিসি মডেলের একটি পালসার মোটর সাইকেল, ইঞ্জিন নং-ডিএইচজিবিইউকে-৬১২১৫, চেসিস নং-এমডি২ডিএইচডিজেডজেডইউসিকে ৯০২০৮, রেজিষ্ট্রেশন নং কক্সবাজার ল- ১১-১৯১৮। এ মোটর সাইকেলটি ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে টেকনাফ মডেল থানা হেফাজতে রয়েছে। অথচ একই নাম্বারের আরেকটি মোটর সাইকেল বৈধ কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ গাড়ির প্রকৃত মালিক একজন জনপ্রতিনিধি ব্যবহার করছেন। এলাকার ইয়াবা পাচারকারীরা জনপ্রতিনিধিকে ফাঁসাতে তাঁর ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের মতো আরেকটি নাম্বার প্লেট বানিয়ে চোরাই মোটর সাইকেলে লাগিয়ে ইয়াবা পাচার করার সময় বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য এবং চেয়ারম্যান প্যানেল-১ মো : শামসুল আলম বলেন ‘গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রতিপক্ষরা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সাবরাং পুরানপাড়া এলাকায় বিজিবি টহলরত অবস্থায় মোটর সাইকেল আরোহীকে সংকেত দিলে গাড়িটি ফেলে পালিয়ে যায় এবং গাড়ি থেকে ৩৯ হাজার ৯৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এঘটনায় বিজিবি বাদী হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলা নং- ২১/৮১৮ ধারা ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধনী-২০০৪) ১৯ (১) এর টেবিল ৯ (খ)। এঘটনায় একটি মোটর সাইকেলও জব্দ করা হয়েছে এবং সাবরাং এর আলী আহমদের ছেলে শামসুল আলম নামে একজনকে পলাতক আসামী করা হয়েছে। উক্ত মামলায় মোটর সাইকেলের জব্দ তালিকায় ১৫০ সিসি মডেলের একটি পালসার মোটর সাইকেল, ইঞ্জিন নং-ডিএইচজিবিইউকে-৬১২১৫, চেচিস নং-এমডি২ডিএইচডিজেডজেডইউসিকে ৯০২০৮, রেজিষ্ট্রেশন নং কক্সবাজার ল- ১১-১৯১৮ দেখানো হলেও জব্দকৃত গাড়িটির মত হুবহু আমার একটি মোটর সাইকেল রয়েছে। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা আমার মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারটি চোরাই মোটরসাইকেলে ভূয়া নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করায় আমার নামের সাথে মিলিয়ে ইয়াবা মামলায় পলাতক আসামী করিয়েছে। তবে উক্ত মোটর সাইকেলের সাথে আমার নামীয় মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন ও চেচিস নাম্বার ভিন্ন এবং আমার নামে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সর্পোট অথরিটির (বিআরটিএ) মূল কাগজপত্র রয়েছে। যার চেসিস নং-এমডি২এ১১সিজেডএক্সসিসিএফ১৩৬১৪, ইঞ্জিন নং-ডিএইচজেডসিসিএফ২০২১৭, রেজিষ্ট্রেশন নং কক্সবাজার-এলএ-১১-১৯১৮। রেজিষ্ট্রেশনের তারিখ :৬/০৩/২০১৩ ইং। এই মোটর সাইকেলটি এখন আমি ব্যবহারও করছি এবং আমার বাড়িতে রয়েছে। বিজিবি কর্তৃক জব্দকৃত মোটরসাইকেলটির (যা বর্তমানে টেকনাফ মডেল থানায় জমা আছে) সাথে আমার মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন নাম্বার, চেসিস নাম্বারের কোন মিল নেই। শুধুমাত্র নাম্বারটি একই। আমার নামে রেজিষ্টেশনকৃত মোটর সাইকেলের নাম্বারটি ষড়যন্ত্রকারী ইয়াবা পাচারকারীরা কৌশলে চোরাইকৃত মোটরসাইকেলের ভূয়া হিসেবে ব্যবহার করে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। প্রশাসন এ বিষয়ে অনুসন্ধান করলে প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী কারা তা বের হয়ে আসবে’।
টেকনাফ-২ বিজিবি’র অতিরিক্ত পরিচালক ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার জানান ‘সাবরাং বিওপির নায়েব সুবেদার মোঃ আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টহল দল সাবরাং ইউপিস্থ পুরানপাড়া এলাকায় নিয়মিত টহলে গমন করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, সাবরাং ইউপিস্থ পুরানপাড়া মসজিদের পাশে পাকা রাস্তায় ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয়-বিক্রয় হতে পারে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে টহলদল দ্রুত বর্ণিত স্থানে গমন করে এবং রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থান নেয়। ১১ নভেম্বর ভোর রাতে পুরানপাড়া হতে একজন লোককে মোটর সাইকেল নিয়ে টহল দলের সম্মুখে আসতে দেখে সন্দেহ হলে তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এমতাবস্থায় মোটর সাইকেল আরোহী টহল দলের ৫০ গজ সামনে মোটর সাইকেলটি থামিয়ে দ্রুত দৌঁড়ে পাশ্বর্বতী গ্রামের ভিতর পালিয়ে যাওযায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে টহল দল উক্ত মোটর সাইকেলটি তল্লাশি করে মোটর সাইকেল এর হ্যান্ডেলের সাথে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগের ভিতর হতে ইয়াবা ভর্তি ১৯৬টি নীল রঙের প্যাকেট উদ্ধার করে। ইয়াবাসহ আটক মোটর সাইকেলটির সাথে পাওয়া কাগজপত্র মতে বিবরণ হচ্ছে ১৫০ সিসি মডেলের একটি পালসার মোটর সাইকেল, ইঞ্জিন নং-ডিএইচজিবিইউকে-৬১২১৫, চেসিস নং-এমডি২ডিএইচডিজেডজেডইউসিকে ৯০২০৮, রেজিষ্ট্রেশন নং কক্সবাজার ল- ১১-১৯১৮। উক্ত প্যাকেটগুলো খুলে গণণা করে ১ কোটি ১৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যমানের ৩৯ হাজার ৯৫ পিস মেটা এ্যামফিটামিনযুক্ত মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত মোটর সাইকেলটির মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট সিজার মূল্য ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা। নিষিদ্ধ ঘোষিত মাদক ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিজ দখলে রাখার অপরাধে পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের করতঃ জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট ও মোটর সাইকেল টেকনাফ মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে’।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।