এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:
সরকার আসে আর সরকার যায়,কালের বিবর্তনে সবকিছুই পরিবর্তন হলেও এগার গ্রামের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আজো হয়নি।দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও সেতু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরে ছয়মাস কাঠের সাঁকো অবশিষ্ট ছয়মাস নৌকা পারাপারে চলাচল করে আসছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার জনগোষ্ঠী।বর্তমান পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডস্থ তরছঘাট এলাকাটি ছিল উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক সেন্টার।ওই বাণিজ্যিক স্থান থেকে ২৫বছর পূর্বে অভিভক্ত বিএমচর,কোনাখালী,সাহারবিল সহ আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকার লোজজনের যাতায়তে মূল কেন্দ্র বিন্দু ছিল তরছঘাটা।সময়ের ব্যবধানে যাতায়তে ক্ষেত্রে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে।পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার আমজনতার পরিবর্তন শুধু মাত্র একটি ব্রীজের কারণে পিছিয়ে রয়েছে।আজো অদৃশ্যমান রয়ে গেল তরছঘাটা-পূর্ব বড় ভেওলা সংযোগ সেতু।স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও স্বাধীনতার পরে ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজো দেখতে পায়নি ওই এলাকার বাসিন্দারা একটি পাকা সেতু।দীর্ঘ ৮যুগ ধরে পূর্ব বড় ভেওলার এগার গ্রামের লোকজন কখনও নৌকা, বাশেঁর সাঁকো এবং কাঠের সেতু দিয়ে নদী পারাপার করতে হয়।প্রতিদিন এ পথ দিয়ে যাতায়াতে ১১গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী পার হয়ে এ পার থেকে ওপারে যেতে যেন তাদের হিমশিম খেতে হয়।বিশেষত:বর্ষায় মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি পেলে স্কুল, কলেজে যাতায়াত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্টানে যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়।ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী মাতামুহুরী নদীর তরছঘাট এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,উপজেলার পূর্ব ভেওলা ইউনিয়নের এগার গ্রামের মানুষ ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়তে একমাত্র পথ হচ্ছে তরছঘাটা-পূর্ব বড় ভেওলা সংযোগস্থ অস্থায়ী কাঠের সেতুটি।এছাড়াও পাশ্বোক্ত সাহারবিল ইউনিয়নের দু’একটি গ্রামের লোকজন এ নদীর কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার করে।যুগ-যুগ ধরে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছেন এগার গ্রামের মানুষ।যে সব গ্রামের লোকজন যাতায়ত করে আসছে তা হল, পূর্ব ভেওলা ইউনিয়নের মাবিয়াবাপের পাড়া, আনিসপাড়া, সেকান্দর পাড়া, নোয়াপাড়া, বুড়ির পাড়া,খরি বাপের পাড়া, কালাগাজী সিকদার পাড়া, ফজল রহমান সিকদার পাড়া, অলি বাপের সিকদার পাড়া, শাহাবখাঁন পাড়া ও পূর্ব নয়া পাড়া।এসব গ্রামের মানুষকে জীবিকা নির্বাহ ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় কৃষির ওপর।একমাত্র কৃষিই এ এলাকার মানুষের প্রধান পেশা।কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে বার বার তারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন একটি সেতুর কাছে।সেতুর জন্য তারা সব সুবিধা ও সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।ওই এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে উপজেলা সদর চিরিংগা বাজারে যাওয়া-আসা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র,কৃষিজাত পণ্য সবজি বিক্রয়ের জন্য বাজারে যাওয়া-আসা করতে এগার গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষের ওই কাঠের সাঁকোটিই একমাত্র ভরসা।বর্তমানে ওই সব গ্রামের মানুষ বিপরীত ৩কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বাটাখালী সেতু পার হয়ে উপজেলা সদরে আসতে হয়।
ইউনিয়নের সামশু মিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা উচমান গণি শাহিন বলেন,এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ওই তরছঘাটা স্থলে একটি পাকা সেতু তৈরি করে দেয়া।আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা তরছঘাট -পূর্ব বড় ভেওলা ঘাট দিয়ে নৌকা কিংবা কাঠের সাঁকোর উপর দিয়ে পারাপার করে আসছে।একটি সেতুর অভাবে এ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত কৃষকরা প্রচুর সবজি উৎপাদন করেও পরিবহন ও বাজারজাত করণের জন্য তারা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।কম মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে পাইকারদের কাছে।আর এতে কৃষকের পরিশ্রমের মুনাফা লুটে নিচ্ছে পাইকাররা।কৃষকরাই তাদের উৎপাদিত সবজি ন্যায্য মূল্য বাজারজাত করতে পারত যদি একটি পাকা সেতু তৈরি করা হতো।
এলাকার সুবিধাবঞ্চিত সেকান্দর পাড়া গ্রামের আফলুল কাদের জানান, যাতায়াতের দুর্ভোগের কারণে উপজেলা সদর থেকে ওই এলাকার মানুষ অনেকটা বিচ্ছিন্ন। অসুস্থ লোকজনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। ফলে হাসপাতালে নেয়ার পথে অনেক রোগী বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুর জীবন অনেক সময় বিপন্ন হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,এ ইউনিয়নটি উপজেলায় কৃষি উৎপাদন সবজি এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।এলাকার অধিকাংশ কৃষক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সেতুর কারণে কৃষকেরা তাদের কৃষিজাত নানা ধরণের পণ্য সবজি চাষাবাদ করেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শুধু মাত্র সেতুর অভাবে।এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যাতায়ত ও দু:খ লাঘবের স্বার্থে
পূর্ব বড় ভেওলাস্থ তরছঘাটা পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর উপর ব্রীজ নিমার্ণ খুবই জরুরি।এখানে একটি ব্রীজ নিমার্ণ করা হলে এলাকায় মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ কৃষকরা সুফল পেত বলে তিনি জানান।
মাতামুহুরী নদীর তরছঘাটাস্থ পয়েন্ট এলাকায় ব্রীজ নির্মাণ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম বিএ(অনার্স)এম এ কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের স্থানীয় বেশ কিছু লোকজন দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে ওই এলাকায় সেতু দাবী নিয়ে মৌখিক ভাবে বলেছেন।ব্রীজ নির্মাণ বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবাইদুল কাদের সাথে এলাকার লোকজনের দুভোর্গের কথা তুলে ধরে এবিষয়ে কথা হয়েছে।তিনি বলেন,মাতামুহুরী নদীর পুরাতন ব্রীজের কাজ শুরু হলেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠী স্বার্থে তরছঘাটা পয়েন্টে যাতায়তে জন্য খুব শীঘ্রই একটি বেলী ব্রীজ নির্মিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।