সিবিএন ডেস্ক:
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আগামী সপ্তাহে পদত্যাগ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তাঁর পদত্যাগের পরই ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের ক্ষমতা নেবেন। সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল এমন খবরই দিয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে, নিজের ছেলেকে ক্ষমতায় বসাতে তিনি সরে যাচ্ছেন।
ডেইলি মেইলের বরাত দিয়ে বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে। খবরে অবশ্য নির্ভরযোগ্য কোনো সুনির্দিষ্ট সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র ডেইলি মেইলকে জানিয়েছে, ‘নাটকীয় কিছু না ঘটলে আগামী সপ্তাহেই ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বাদশাহ সালমান।’ পশ্চিমা বিশ্ব ও সাংবাদিকেরা মোহাম্মদ বিন সালমানকে সংক্ষেপে ‘এমবিএস’ নামে লিখে থাকেন।
ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর বাদশাহ সালমানের দায়িত্ব হবে অনেকটা ইংল্যান্ডের রানির মতো। সূত্র জানায়, ‘যদি নাটকীয় কোনো ঘটনা না ঘটে তবে আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবের বাদশাহ হতে যাচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
বাদশাহ হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদার’ থাকবেন সালমান বিন আবদুল আজিজ। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটির বাদশাহ পবিত্র কাবা ও মসজিদে নববীর জিম্মাদারের পালন করে আসছেন। সালমানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই প্রথমবারের মতো বাদশাহের বাইরে কারও হাতে মসজিদ দুটির দায়িত্ব থাকবে।
ওই সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, ক্ষমতা নেওয়ার পর ইরানের দিকে পুরোপুরি নজর দেবেন মোহাম্মদ বিন সালমান। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরানের সঙ্গে অনেক দিন ধরে সৌদি আরবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপও নিতে পারে সৌদি আরব। এমনকি ইসরায়েলের সহায়তায় লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে বলে ডেইলি মেইল জানিয়েছে।
ওই সূত্রের খবরে বলা হয়, রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চান এমবিএস।
ইসরায়েলের সামরিক সমর্থন নিয়ে ‘এমবিএস’ লেবাননের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ঐকমত্য হলে ইসরায়েলকে দেওয়া বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন ঘটবে। সূত্রটি বলেছে, এমবিএস ইসরায়েলের সমর্থন ছাড়া হিজবুল্লাহকে মোকাবিলা করতে পারবেন না। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরি রিয়াদে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ও বিরুদ্ধাচারণ দুর্বল করতে এ মাসের শুরুতে সৌদি রাজপরিবারে গ্রেপ্তার অভিযান চালান বর্তমান যুবরাজ সালমান। দুর্নীতির অভিযোগে প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালালসহ ১১ জন যুবরাজ ও চারজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। বরখাস্ত করা হয় নৌবাহিনীর প্রধানকে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীও গ্রেপ্তার হন। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বিলাসবহুল রিজ-কার্লটন হোটেলে রাখা হয় তাঁদের। এই হোটেলে থাকা বন্দীদের কম্বল মুড়িয়ে মেঝেতে ঘুমানোর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
শাসনব্যবস্থায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। এর পেছনে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যকে ছাপিয়ে আরও কিছু রয়েছে। বিশেষ করে যুবরাজের সম্ভাব্য বিরোধীদের সরিয়ে দিতেই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ ২০১৫ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বে বর্তমান যুবরাজকে খুব কম লোকই জানতেন। তাঁর ক্ষমতায় আরোহণের প্রস্তুতি শুরু হয় তিন বছর আগে থেকে। এরই মধ্যে তিনি বেশ কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে তিনি নারীর গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ওই সময় তিনি বলেন, সৌদি আরবে দশকের পর দশক ধরে চলে আসা রক্ষণশীল ঐতিহ্যকে ভাঙার চেষ্টা করছেন তিনি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি কিছু খাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমিয়ে এনেছেন। গত জুনে সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন বাদশাহ সালমান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।