ডেস্ক নিউজ:
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ‘ক্রান্তিলগ্নে’ দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কি বার্তা দেন-সেই অপেক্ষায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে দলটির একাধিক নীতিনির্ধারণী নেতার সাথে কথা বলা জানা গেছে, আগামীকাল রবিবারের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপরসন মূলত দু’টি বিষয়ের উপর জোর দিতে পারেন।
.
প্রথমত: একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে বললেন খালেদা জিয়া। দ্বিতীয়ত: সকল দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন তিনি।
এছাড়া সমাবেশে রোহিঙ্গা ইস্যু, সাংবাদিক নির্যাতন ও গুম, সাধারণ নাগরিক ও দলের নেতা-কর্মীদের গুম, হত্যা ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া।
নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। রোববার এ সমাবেশ করতে অবশ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ২৩টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
শনিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতির কথা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো শর্তেই হোক বা শর্ত ছাড়াই হোক সমাবেশ করবে বিএনপি’।
সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীকে কি বার্তা দিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সমাবেশে দেশনেত্রী (খালেদা) গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিবেন। আশা করি জনগণকে তিনি একটা মেসেজ দিবেন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগে থেকে এটা কি করে বলল। তবে শুধু এটুকু বলি, উনি দেশের কথা বলবেন, জনগণের কথা বলবেন। গণতন্ত্রের কথা বলবেন।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের কথা তো বলবেনই। বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে না তা তো নয়। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে পূর্ব শর্তগুলো আছে সেগুলোর কথা বলবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, ‘সমাবেশের মাধ্যমে নেত্রী মূল বার্তাটা দিবেন আগামী নির্বাচন নিয়েই। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি অবশ্যই আহ্বান জানাবেন তিনি। পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে ম্যাডাম জনগণকে আন্দোলনের কথা বলবেন।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের নেত্রী বলেছেন তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। শুধু জাতীয়ভাবে নয়, এটা আন্তর্জাতিকভাবেও একটা বার্তা যাবে। ম্যাডাম প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না, ভব্যিষতেও করবেন না তারও একটা বার্তা আছে। এছাড়া চলমান সংকট নিয়েও কথা বলবেন তিনি।’
ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘মানুষের যে দাবি তা জনগণের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কণ্ঠে উচ্চারিত হবে। দেশ যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, জনগণ দিক-নির্দেশনামূলক যে বক্তব্য চান নেত্রী সমাবেশে সেই বক্তব্যই উপস্থাপন করবেন।’
সর্বশেষ গত বছর পয়েলা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশ করে বিএনপি। এর আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এর আগে ওই বছরের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সুযোগ পায় দলটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে এ সমাবেশ করে বিএনপি। দীর্ঘ প্রায় ১৯ মাস পরে রাজধানীতে সমাবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে দলটি। এ সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে চায় দলটির নেতাকর্মীরা।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। ডিএমপির শর্ত অনুযায়ী বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে।
এছাড়াও সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে বিএনপিকেই তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলেছে ডিএমপি।
সমাবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের করাও অন্যতম প্রধান শর্ত। সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে না আসতেও বলেছে ডিএমপি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।