এইচ. এম. রুস্তম আলী, ঈদগাঁও :
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও, জালালাবাদ, ইসলামাবাদ, চৌফলদন্ডীর আঞ্চলিক সড়কে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে ব্যাটারী চালিত টমটম, অটোরিক্সা এসব এলাকায় প্রায়ই বেপরোয়া চলাচলে টমটমের ধাক্কায় ও পিষ্ঠে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ফলে শংকিত যাত্রী ও সাধারণ পথচারী। অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণ ছাড়াই বেপরোয়া গতির টমটম চালাচ্ছেন চালকরা। বৃহত্তর ঈদগাঁওর ৫৪৫.৮৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ছোটবড় ১০টি সড়ক রয়েছে। ব্যস্ততম ঈদগাঁও বাসস্টেশন কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়ক মেইন রোড থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কে চলে প্রায় ১৫০০টি টমটম, ২০০০ অটোরিক্সা, ৩/৪শ মাহিন্দ্রা, শতাধিক ম্যাজিক গাড়ী। এর মধ্যে ইসলামাবাদ গোমাতলী সড়কটি নতুনভাবে সংস্কার হচ্ছে। ঈদগাঁও ডিসি রোডের ভূমি অফিস থেকে মাইজ পাড়া রোডের মাথা পর্যন্ত, আলমাছিয়া মাদ্রাসা সড়ক এবং ঈদগাঁও ঈদগড় সড়ক সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়ক খানা খন্দকে ভরা ও কিছু রোডে কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সব মিলিয়ে অধিকাংশ সড়কের অবস্থা সিজারিয়ান রোগীর মতই। এসব রাস্তা দিয়েই চলছে বেপরোয়া গতির টমটম ও অটোরিক্সা। বিশেষ করে চৌফলদন্ডী সড়কে ১লা নভেম্বর খোনকারখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র তামিমকে তার স্কুলের সামনে দ্রুতগামী টমটম ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। বছরের শুরুর দিকে একই এলাকায় টমটমের ধাক্কায় আরো ২ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। গত ১০ অক্টোবর ইসলামাবাদের খোদাইবাড়ী এলাকায় টমটম বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ২ জন, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুসহ মোট ৩ জন নিহত হয়। এর আগে গত ৩ এপ্রিলে সন্ধ্যায় ওয়াহেদর পাড়া গ্রামের মোহাম্মদ শফির পুত্র শুভানয়কে দ্রুতগামী টমটম ধাক্কা দিয়ে চলে গেলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদের ঢালার দোয়ার নামক স্থানে সকাল ১০টায় বেপরোয়া টমটম গাড়িকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী এসআলম বাস খাদে পড়ে গেলে ২৫জন যাত্রী কমবেশি আহত হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার রহিম নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। গত বছর ডিসেম্বরে বাসস্টেশন গরু বাজারে করিম ব্রাদার্স পেট্রোল পাম্পের সামনে মাহিন্দ্রা ও টমটমের ধাক্কায় ২ শিশু গুরুতর আহত হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ৩দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একজন। আহত শিশু আরমান এখনো পঙ্গু অবস্থায় বাড়ীতে রয়েছে। এখানেই শেষ নয়। আজ ১১ নভেম্বর ঈদগাহ ফরিদ আহমদ কলেজ গেইটে দ্রুতগামী ম্যজিক গাড়ির ধাক্কায় মাইজ পাড়া গ্রামের ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি রহমত উল্লাহকে ধাক্কা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ নিয়ে বৃহত্তর ঈদগাঁওতে প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে টমটম, অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রা, ম্যাজিক গাড়ী দ্বারা এমনই ছোটবড় দূর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। সব ঘটনা জানাজানি হলেও বেপরোয়া সড়ক দূর্ঘটনায় শংকিত পথচারীরা। এসব টমটম, অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রা ও ম্যাজিক গাড়ী চলাচলের বিআরটিএ’র অনুমোদন আছে কিনা তাও সাধারণ মানুষের জানা নেই। তবে ডুলাহাজারা হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মধ্যে ২/৪টি টমটম ধরলেও মোটা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও কম নেই পুলিশের বিরুদ্ধে। অদক্ষ চালকের হাতে স্টিয়ারিং হাতে থাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা প্রবণ মোড়গুলোতে কিভাবে গাড়ি চালাতে হবে এ ব্যাপারে কারো ধারণা নেই। এসব অশিক্ষিত-অদক্ষ চালকদের। ২০১৬ সালে ৩ সেপ্টেম্বর বিকালে বাসস্টেশন এলাকার উত্তর পাশের্^ অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বৈধ কাগজপত্র গাড়ীতে না থাকা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় হাইওয়ে পুলিশ পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের মোটর যান অধ্যাদেশ অনুযায়ী জরিমানা আদায় করেছিল। তারপর আর টমটম, মাহিন্দ্রার লাগাম টেনে ধরা হয়নি। কক্সবাজার কলেজের প্রভাষক সুলতান আহমদ বলেন, ব্যস্ততম বাণিজ্যিক শহর ঈদগাঁওতে প্রতিদিন বাড়তি জনসংখ্যা আর যানবাহন যাতায়াত করছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সড়ক প্রশস্তকরণ, যানবাহনের সংখ্যা নির্ধারণ হয়নি। ফলে ট্রাফিক সিসটেমও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারছে না। দিনদিন জনসংখ্যার পাশাপাশি যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে যাওয়ায় কোথাও না কোথাও সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছে। ফলে রাস্তায় নামলে প্রতি মুহুর্তে আতঙ্কগ্রস্থ থাকতে হয়। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টমটম, মাহিন্দ্রা চালকদের কাছ থেকে সমিতির নামে নিয়মিত চাঁদা তুলছেন এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল। তারা বিআরটিএ, পুলিশসহ যাবতীয় ঝামেলা সামাল দেয়ার দায়িত্বে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে চালকদের। এ ব্যাপারে ডুলাহাজারা হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতিত অদক্ষ চালকদের হাতে টমটম মাহিন্দ্রার রুট পারমিট ও গাড়ির অনুমোদন দিচ্ছে কেন বিআরটিএ? তারা অযোগ্য চালকের হাতে স্টিয়ারিং ধরিয়ে দিবেন আর সড়ক দূর্ঘটনা ও যানজট নিরোধে কাজ করবে পুলিশ! এটা কেমন? টমটম কর্তৃক সড়ক দূর্ঘটনা ও যানজটের বিষয়ে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. খায়রুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, ট্রাফিক সিসটেম ও যানজট নিরোধের জন্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, গাড়ির মালিক ও এলাকার প্রত্যেকটা দায়িত্বশীল ব্যক্তির সহযোগিতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। জালালাবাদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ বলেন, যে কোন গাড়ি চলাচলের সময় অদক্ষতার পরিচয় দিলে সেটা আটকানোর দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের।