হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
ভেলায় করে রোহিঙ্গাদের টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা বাহিনীর নির্যাতন বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি ভয়ভীতি। রাখাইনদের সঙ্গে নিয়ে সেনা বাহিনীরা রাতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে গুলি বর্ষন ও ধরপাকড় করেছে, যাতে রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে নৌকা না পেয়ে প্রাণে ভয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে ১৫ পরিবারের ৭৫ জন রোহিঙ্গা ২টি ভেলায় চড়ে নাফনদী পেরিয়ে টেকনাফের সাবরাং কেওড়া বনে এসে পৌছায়। শনিবার ১১ নভেম্বর সাবরাং ইউনিয়নের মগপাড়ায় ভেলা থেকে নেমে এসব কথা বলেছেন সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সুলতান আহমদ। তার বয়স ৬০ বছর। বাড়ি মিয়ানমার মংডু সুদা পাড়া গ্রামে। বেলা ১১ টার দিকে গাদাগাদি করে ২ টি ভেলায় চড়ে সাবরাং এ পৌছাঁন ৭৫ জন রোহিঙ্গা। তারা সকলেই মিয়ানমারের মংডু সুদা পাড়া ও সাংগু পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সুলতান আহমদ জানান, তিনিসহ একই গ্রামের ৭৫ জনের মতো বাঁশের ভেলা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমার সেনা বাহিনী ও রাখাইনরা মিলে প্রতিদিন রাতে যেসব গ্রামে এখনও রোহিঙ্গারা বসবাস করছে, ওইসব গ্রামে ঢুকে গুলি বর্ষণ করছে যাতে লোকজন ভয়ভীতি পায়। গত দুই আগে সন্ধায় তার গ্রামের চার জন যুবক পানি আনতে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তাদের সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যায়, তখন থেকে তাদের কোন খোঁজ খবর নেই। হয়তো তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। ওরা খুব বেশি ভয়ঙ্কর তাই যেকোন উপায়ে প্রাণে বাচঁতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত রেখেছে। আগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নৌকা দিয়ে রোহিঙ্গারা পারপার করতো সীমান্ত কড়াকড়ির কারণে ওইসব নৌকার চলাচল এখন বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া গত দুই মাসের বেশি ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনরা মিলে রোহিঙ্গা জনগোষ্টীদের ওপর যেহারে বর্বরতা চালিয়েছে এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুঃস্বৃতি হয়ে দাড়িছে। আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। নৌকা না পেয়ে এবার নতুন কৌশল সাঁতার, জারিকেন ও বাঁশের ভেলায় চড়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, গত ২০ দিন আগে সেনাবাহিনীর ভয়ে মিয়ানমারের মংডুর দংখালী নামক চরে আশ্রয় নিয়। সেখানে প্রায় ১৬ হাজারের মতো মানুষ রয়েছে যারা সবাই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষামান। অবশেষে নৌকা না পেয়ে ভেলায় করে তারা এপারের উদ্দ্যেশে রওনা দেন। ৮ ঘন্টা পর তারা এপারে পৌছায়। নাফনদী মাঝপথে হঠাৎ করে দক্ষিন দিকে বাতাস শুরু হয়। তখন আমরা সবাই খুবই ভয় পেয়েছি মনে হচ্ছিল ডুবে সবাই মরে যাব। কেননা ওই বাঁশের ভেলাতে ৩৩ জনের বেশি শিশু ছিল। বাকিরা নারী ও পুরুষ।
স্বামীকে হারিয়ে পাচঁ সন্তান নিয়ে ভেলায় চড়ে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গা নারী দিলবাহার বেগম (৩৫)। তার চোখ দুটোতে ছিল হতাশা আর কান্না। তিনি জানান, সেনারা এখনও ক্ষান্ত হননি। তারা এখনও লোকজন ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না কাউকে। এখনও যারা ওপারে বসবাস করছে প্রতি মূর্হতে মৃত্যু তাদের তাড়া করছে। আমরা এতোদিন সেখানে ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটচ্ছিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ে দেশ ছেড়ে পরিবারকে নিয়ে চলে আসছি। তাছাড়া এ নৌরুটে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবার অনেকের নৌকা ভাড়া নাই। প্লাষ্টিকের জারিকেন দিয়ে একটি বাঁশের ভেলায় তৈরী করে গাদাগাদি করে ঝুকিঁ নিয়ে নাফনদী পাড়ি দিয়ে এপারে পালিয়ে আসি। দংখালী চরে থাকা লোকজন আরও বাঁশের ভেলা তৈরী করছে। যাতে করে ভেলায় চরে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেন তারা এমনটি বলেছেন ভেলা চড়ে আসা সদ্য অনুপ্রবেশকারি মোহাম্মদ ফয়সাল ও আবদুল হামিদ। তাদের বাড়ি মিয়ানমার সংগু পাড়া গ্রামে।
টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, শনিবার দুইটি ভেলায় চড়ে নাফনদী পাড়ি দিয়ে ৭৫ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ৩৩ জন শিশু ছিল। বাকিরা নারী ও পুরুষ। সীমান্তে কড়াকড়ির কারনে আগের মতো নৌকা পারাপার করতে পারছেনা। বলতে গেলে নৌকা চলাচল এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বলেন, তারা নৌকা না পেয়ে প্রাণে ভয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করে ভেলায় চড়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে। এমনকি এখনও সাঁতরিয়ে লোকজন আসছে। তাদেরকে মানবিক সহযোগিতা দিয়ে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা শরাণার্থী শিবিরে পাঠানো হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।