ডেস্ক নিউজ:
সংবিধান অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাই এখন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। শনিবার বিকেলে গুলশানে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই দায়িত্ব পালন করে যাবেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দায়িত্বে আছেন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পরও যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নতুন একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দিচ্ছেন, ৯৭ অনুচ্ছেদ বলে ততক্ষণ পর্যন্ত অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি থাকবেন মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পদ যদি শূন্যও হয়ে থাকে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রয়োগ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ হবে, কোনো শূন্যতার সৃষ্টি হয়নি।’
পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছে। শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ চেয়ে এসকে সিনহার আবেদনটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পৌঁছেছে। সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এই আবেদনপত্রটি এসেছে।’
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে ছুটি নিতে সরকার বাধ্য করেছে। এতে করে বিচারবিভাগের যেটুকু স্বাধীনতা ছিল সেটাও এই সরকার নস্যাৎ করেছে।’
এরই জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগে কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি। বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, তারা হয়ত এসব কথা বলেন। আমি তাদেরকে শুধু বলব- পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ, সেখানে মাছ শিকার করার কোনো উপায় নেই।’
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা পদত্যাগ করেছেন বলে আজ শনিবার সকাল থেকেই গুঞ্জন ছিল। বিতর্কের মধ্যে গত ১৩ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করা সিনহার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে শুক্রবার (১০ নভেম্বর)।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে গত ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসের ছুটি নেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি দাবি করছে, প্রধান বিচারপতিকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
এস কে সিনহা ছুটি নেয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। পরে প্রধান বিচারপতি সিনহা ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করতে চান- বিষয়টি উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি পাঠান।
১২ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে বা তার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা।
বিদেশে যাওয়ার সময় এক বিবৃতিতে এসকে সিনহা নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ দাবি করে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।