জসিম মাহমুদ, টেকনাফ:

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ হলেও বন্ধ হয়নি ভয়ভীতি। রাখাইনদের সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনীরা রাতে গ্রামে গ্রামে গিয়ে গুলি বর্ষন ও ধরপাকড় করেছে, যাতে রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। পারাপারের জন্য নৌকা সংকটের কারণে রোহিঙ্গারা এখন মিয়ানমার থেকে ভেলা ভাসিয়ে রাখাইন রাজ্যে ছেড়ে নাফনদী পেরিয়ে পালিয়ে এসেছেন টেকনাফে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলায় শাহপরীর দ্বীপে দুটি ও সাবরাং এর নয়া পাড়া একটিসহ সবমোট তিনটি ভেলায় ১৮০জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। তারমধ্যে ৯৪ জন শিশু, ৪৯ নারী ও ৩৭ পুরুষ রয়েছে।

অন্যদিকে, উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে দিয়ে বুধবার দিবাগত রাত আটটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ছয় পর্যন্ত নতুন করে আরও ৭৩১জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। পরে তাদের সেনাবাহিনীর ত্রাণ কেন্দ্রে মাধ্যমে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে।

ভেলায় করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা সুলতান আহম্মদ বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার জন্য নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা প্লাস্টিকের তেলের জারিকেন, কাঠের তত্বা ও রশি দিয়ে ভেলা বানিয়ে পারাপার করছেন। মিয়ানমার সীমান্তে অপেক্ষামান রোহিঙ্গারা ১২-১৫টি মতো নতুন করে ভেলা তৈরি করছেন। গত বুধবার একটি ভেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে ভাসিয়ে আসতে পারায় এখন রোহিঙ্গারা ভেলার সহযোগিতায় পাড়ি দেবেন।

তারা আরও বলেন, ভাসানোর আগেই মনে হয় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শিশুদের নিয়ে একটু চিন্তায় থাকতে হয় বেশি। জোয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী, পুরুষরা বৈঠার সহযোগিতায় পৌছাতে পেরেছি।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় শাহপরীর দ্বীপে দুটি ও সাবরাংয়ে একটিসহ সবমোট তিনটি ভেলায় ১৮০জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। তারমধ্যে ৯৪ জন শিশু, ৪৯ নারী ও ৩৭ পুরুষ রয়েছে। ঘটনার শুরু থেকে কিছু নৌকার মালিক, মাঝি ও দালালদের যোগসাজসে মোঠো অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা পারাপার করতে গিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবিতে নাফনদী ও সাগর তীরবতী এলাকা থেকে প্রায় দুইশতাধিক শিশু, নারী ও পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন নৌকা চলাচলের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে নাফনদীতে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয়। এরপরও রোহিঙ্গা রাতের আধাঁরে নৌকায় করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ ও নৌকার মাঝি, মালিক ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় রোহিঙ্গারা এখন ভেলা ভাসিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ভাসিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জড়ো করে মানবিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে সেনা বাহিনীর মাধ্যমে উখিয়ার বালুখালীতে পাঠানো হচ্ছে। গত বুধবার একটি ভেলায় করে ৫২ জন রোহিঙ্গা এসেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নৌকার সংকটের কারণে রোহিঙ্গারা প্লাস্টিকের তেলের জারিকেন, কাঠ ও রশি দিয়ে ভেলা বানিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।

সাবরাং হারিয়াখালী সেনা ত্রাণ কেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বুধবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার পর্যন্ত ১৬০পরিবারের ৭৩১জন রোহিঙ্গাকে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যা¤পে পাঠানো হয়েছে।