হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ
টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার নিষেধের প্রতিবাদে অসহায় জেলেরা মানববন্ধন করেছেন। বুধবার ১ নভেম্বর সকাল ১১টায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে টেকনাফ উপজেলার উপকুলীয় এলাকার নাফ নদী নির্ভর জেলেরা মানববন্ধন করেন। উপকুলীয় জেলে সমাজ এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
মানববন্ধনে আসা নাইট্যংপাড়ার জেলে ইব্রাহীম হোসেন, মোঃ ছৈয়দ হোসেন, শামসুল আলম, গুরা মিয়া, জালিয়াপাড়ার লাল মিয়া, হ্নীলার মোঃ শাহ, কসিমন, ওয়াব্রাংয়ের আক্কাছ উদ্দিন, নাটমুরা পাড়ার ধর্মেন্দ্র, জেলেপাড়ার মিলন বড়–য়া, লেদার জামাল উদ্দিন, নয়াপাড়ার জেলে মোঃ ইসমাইল ও জাদীমুরার নুরুল আমিন, নয়াপাড়ার জেলে মোঃ ইসমাইল বলেন ‘নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্দ থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার জেলে পরিবার। এরপর ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২৩ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও সাগরে মাছ শিকার শুরু হলেও টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার অঘোষিত বন্ধ রাখা হয়েছে। একটানা মাছ শিকার বন্ধ থাকার ফলে নাফ নদ নির্ভর জেলে পরিবারগুলোতে নেমে আসে দূর্দশা। জীবন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। বিকল্প কোন আয়ের উৎস না থাকায় জেলে পরিবারের মধ্যে চলছে হাহাকার। অনেকেই দু’বেলা খাদ্য যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মাছ শিকার বন্ধ থাকায় নাফ নদীর পাশ্ববর্তী বাজার গুলোতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া টেকনাফে মিঠাপানির মাছ তুলনামুলকভাবে অনেক কম। ফলে নাফ নদী ও সাগরের মাছের উপর পুরো উপজেলা নির্ভরশীল। নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধের ফলে আয় রোজগার নেই। ফলে এক বেলা খেতে পারলেও আরেক বেলা খেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নদীতে টানা জাল ও কাঁকড়া শিকার করে সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হতো। ১ নভেম্বর থেকে নাফ নদীতে মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা থাকলেও নাফ নদীতে মাছ শিকারে গেলে বিজিবি জওয়ানরা বাধা সৃষ্টি করছে এবং মাছ শিকার বন্ধে ‘উপরের নির্দেশ’ আছে বলে জেলেদের জানান বিজিবি জওয়ানরা। নিরুপায় হয়ে আমরা আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে মানববন্ধনের আয়োজন করেছি’।
জানা যায়, এভাবে নাফ নদীর উপর নির্ভর টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৮ হাজার জেলে ও তাদের পরিবার প্রায় আড়াই মাস ধরে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। টেকনাফ উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে জেলেদের পুর্নবাসনের কথা বলা হলেও এপর্যন্ত কোন সাহায্য তারা পায়নি বলে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। শিগগিরই নাফ নদীতে মাছ শিকার থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান জেলে পরিবারগুলো।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন সিদ্দিক (ইউএনও) বলেন ‘মিয়ানমারের সহিংসতা, ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারী নির্দেশে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উক্ত নির্দেশ বলবৎ ছিল। নতুন কোন নির্দেশনা না আসায় উক্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া এই সময়ের জন্য তালিকাভুক্ত জেলেদেরকে বিশেষ কর্মসুচীর আওতায় আনা হয়েছে এবং তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেয়া হবে’।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।