ইমাম খাইর, সিবিএন:
আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। এই কষ্টের ফল আপনারা পাবেন। আপনারা ধৈর্য ধরেছেন। এই শ্রম বৃথা যাবে না। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সার্কিট হাউজ ত্যাগ করার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি ধৈর্য সহকারে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
খালেদা জিয়াকে এগিয়ে দিতে কক্সবাজারের নেতাকর্মীদের গাড়িও বহরের সঙ্গে রওয়ানা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার সীমানা পর্যন্ত গাড়িবহরকে এগিয়ে দেবেন তারা।
সোমবার সোমবার বেলা ১ টার দিকে উখিয়ার শফি উল্লাহকাটা ঢালা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
শফি উল্লাহকাটা ঢালা ক্যাম্পের পরে বালুখালী-২ তে ত্রাণ দেন খালেদা জিয়া। এর আগে বিএনপির ৪৫ ট্রাক ত্রাণ সেনা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
ত্রাণ বিতরণ শেষে বালুখালি পান বাজারে অবস্থিত ড্যাবের মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া। ক্যাম্পে সন্তান সম্ভবা প্রায় পাঁচ হাজার নারীকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী, পাঁচ হাজার শিশুকে শিশুখাদ্য বিতরণ করেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যা ৭ টা ২৫ মিনিটে গাড়ীর বহরসহ চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজ থেকে রওয়ানা করেন তিনি। রবিবার রাত ৮টার দিকে সড়ক পথে কক্সবাজার পৌঁছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, বেগম জিয়া আজ সোমবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থান করবেন। সেখানে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বেঠকও করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বেগম জিয়ার আগমণকে ঘিরে পুরো শহরে উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। নেত্রীকে কাছ পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তবে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে পড়তে হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে। ফেনী ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তাঁর গাড়িবহরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে সাংবাদিকসহ বেশ কিছু মানুষ আহত হন। হামলায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণকালে এক রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে নিয়ে মায়ের মমতা দিয়ে আদর করেন বেগম জিয়া। এ সময় তিনি শিশুটির মায়ের কাছে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলেন। শুনেন স্বদেশ ছাড়ার কারণ। বর্ণনার এক পর্যায়ে খানিকটা সময়ের জন্য অবেগ আপ্লুত হয়ে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইফ শাহজাহান চৌধুরীসহ অনেক নেতা সঙ্গে ছিলেন।
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। প্রতিদিন নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে ভিড় করছে রোহিঙ্গারা। এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি’ উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পে বসবাস করছে। এটি এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নতুন করে রাখাইনে সহিংতার শুরু পর বিপদসংকুল সমুদ্র ও নদী পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গাদের যখন বাংলাদেশমুখী ঢল নামে, তখন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন ছিলেন। সেখান থেকে বিবৃতির মাধ্যমে সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
তিন মাসের বেশি সময় লন্ডনে চিকিৎসা শেষে গত ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের যাওয়ার কর্মসূচি দেন খালেদা জিয়া। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও দেশের সব রাজনৈতিক দল রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছে।