গোলাম আজম খান :
আরকান রাজ্যের রোহিঙ্গাদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে প্রাণঘাতি এইচআইভি রোগ ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এখানকার চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে রোহিঙ্গারা এখন বলছেন মিয়ানমারের চিকিৎসকেরা তাদের চিকিৎসার নামে এইচআইভির জীবানু প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে এটা এখন তারা বিশ্বাস করেন। কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে ধীরে ধীরে অনেক এইচআইভি ও এইডস রোগে আক্রান্ত লোকজন পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার সরকারী হাসপাতাগুলোতে এবং চিকিসকদের কাছে এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গারা গোপনে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা আক্রান্তদের কাছে রোগের যাবতীয় ইতিহাস জেনে নেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। এ সময় তারা যেসব প্রশ্ন করেন তা থেকেই বেরিয়ে আসে এইচআইভি/এইডস রোগ কিভাবে রোহিঙ্গাদের আক্রান্ত করেছে।
এখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে এইচআইভি/এইডসের রোগে আক্রান্ত প্রচুর রোগী রয়েছে। তাছাড়া দেশটিতে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কারণে অনেক কিছুই নিয়ম মতো সমাধা হয়না। ফলে এইডস রোগে সেখানে কত আক্রান্ত হয়েছে এবং আর কত জন এইচআইভি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার সঠিক কোনো ইতিহাস নেই।
উখিয়ায় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা মিয়ানমারের চিকিৎসকদের প্রতারণার শিকার। একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার কাছে একজন রোগী জানিয়েছেন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ডেলিভারীর জন্য। সেখানে রক্ত নেয়ার প্রয়োজন ছিল। এরপর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসার ৫/৬ বছর থেকে শরীরে নানা রকম সমস্যা হতে শুরু করে। পরে নানা ধরনের চিকিৎসার পর একটি বড় সরকারী হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করার পর জানা গেছে, তার দেহে এইচআইভির জীবানু পাওয়া গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই রোগিটি ছিল মহিলা। ডেলিভারীর সময় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জন্য শান্ত পরিবেশ ছিল বলে সেখানে পরীক্ষা করে জেনেছেন যে মহিলার এইচআইভি হয়েছে।
চিকিৎসকের কাছে অন্য একজন পুরুষ জানিয়েছেন, ময়ানমারে শান্ত পরিবেশের সময় তিনি সরকারী হাসপাতালে গিয়েছিলেন কিছু টেস্ট করার জন্য। এর ৫/৬ বছর পর তার শরীরের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে রোগে বাসা বাধলে কোনো রোগই ভাল হয়না। এ কারণে একদিন মিয়ানমারের একজন ভাল ডাক্তারের কাছে গেছে গেলে তিনি তাকে পরীক্ষা করে জানান যে তার এইডস হয়েছে। এখন তিনি (এইডস আক্রান্ত রোগী) মনে করতে পারছেন যে ওই সরকারী হাসপাতালে একটি সিরিঞ্জ দিয়েই অনেকের দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করেছে সেখানকার ডাক্তার।
এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে আরেকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের এটাও একটি অংশ হতে পারে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রক্ত নেয়া এবং ইনজেকশন দেয়ার সময় মিয়ানমারের ডাক্তাররা ষড়যন্ত্রমুলকভাবে এইচআইভি/এইডস জীবানুযুক্ত সিরিঞ্জ দিয়ে সুস্থ রোহিঙ্গাদের ইনজেকশন দিয়ে থাকতে পারে যা একেবারেই অনৈতিক। চিকিৎসকদের শপথের সাথে এসব আচরণ সামঞ্জস্যহীন।
এখানকার ওই চিকিৎসকা জানিয়েছেন, তারা এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের সাথে কথা বলে জেনেছেন, এদের বেশির ভাগই খুব রক্ষণশীল। তাছাড়া রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন রাজ্যে দুরের কথা এমনকি এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতেও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন লাগে। যাদের অন্য পাড়ায় যেতে অনুমতি লাগে এদের পক্ষে অন্য কোথাও গিযে অনৈতিক কাজ করা সম্ভব নয়।
এইচআইভি আক্রান্ত একজন মহিলা রোগী জানিয়েছেন, তিনি নিজে কখনো অনৈতিক কোনো আচরণ করেননি। তার স্বামীও কখনো এ ধরনের কাজ করবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি তার স্বামীকে খুবই বিশ্বাস করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, আক্রান্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের চিকিৎসকদের ষড়যন্ত্রের শিকার। ওখানকার চিকিৎসকেরা জেনে বুঝেই এই জঘন্য কাজটি করেছেন হয়তো। রোগীরা যখন বিভিন্ন টেস্ট করার জন্য রক্ত দিয়েছেন এবং যখন থেকে তাদের মধ্যে এইচআইভির প্রতিক্রিয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে রোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই সময়টি হিসাব করে দেখা গেছে, ওই সময়ের মধ্যেই মানুষের শরীরে এইচআইভি’র লক্ষ্মণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। উল্লেখ্য এইচআইভি’র জীবানু শরীরে প্রবেশের পর থেকে লক্ষ্মণ প্রকাশের সময়কাল ৬ থেকে ৮ বছর। এখানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের যারা এসেছেন তাদেরও ঠিক এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্মণ প্রকাশিত হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যের বুচিডংযের বাসিন্দা আসমা (প্রকৃত নাম নয়) নামের একজন রোহিঙ্গা মা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধ্ াতারা পাননি। হাসপাতাালেই যেতে পারেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে টিকা দেয়া হয়েছে তাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে বলে। আসমা জানিয়েছেন, এখানে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে মিয়ানমার সরকার এইচআইভির মতো কোনো জীবানু আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে কিনা জানি না। মিয়ানমারে টেন ক্লাস পড়ুয়া আসমা জানান, আমাদের এ অভিযোগটি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের তদন্ত করে দেখা উচিৎ।