আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ:
শুকিয়ে প্রায়ই হাড্ডিসার শিশুগুলো। প্রচন্ড গরমে শুয়া অবস্থায় অনবরত কাঁদছে। সেখান থেকে মা কোলে নিয়ে শান্তনা দেওয়ার প্রাণপন চেষ্টা করছে। কিন্তু কান্না থামছেই না। ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে জাদিমুরা রোহিঙ্গা বস্তির পৃথক দুই পরিবারে যমজ শিশুর এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এসময় এপ্রতিবেদকের সাথে কথা হয় যমজ শিশুর মাতাদ্বয়ের সাথে। এদের এক পরিবার গত ৮ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার রাখাইনের মংডুর পেরানপ্রু গ্রাম থেকে এদেশে আশ্রয়ে পালিয়ে আসে মোঃ হাসিমের স্ত্রী জাহেদা বেগম (২৮)। সে জানায়, গত দুই বছর আগে শিশু সন্তান সাজেদা বেগম ও নুরুল হুদা যমজ হয়ে জম্ম গ্রহন করেন। বুকের দুধের পাশাপাশি বাজারজাত দুধ পান করে ক্রমেই বড় হচ্ছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে প্রথম দিনেই তাদের গ্রামে হানা দেয় সেনাবাহিনী। কোন কিছু বুঝার আগেই ঘরে ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এসময় মানুষ প্রাণপন যেদিকে পারে ছুঁটছে। পালানোর সময় সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে পুরুষদের হত্যা করেছে। এতে তার স্বামী মোঃ হাসিমও গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। কোন রকমে যমজ দুই শিশুকে নিয়ে গ্রামের অন্যান্যদের সাথে পাশ্ববর্তী গ্রামে পালাতে সক্ষম হয়েছে জাহেদা বেগম। সেখান থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর নাইট্যং পাড়া সীমান্ত দিয়ে এপারে আশ্রয়ে চলে আসে জাহেদা। এসময় অর্ধাহারে অনাহারে দুই শিশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে অনেকবার রাত যাপন করতে হয়েছে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে যমজ দুই শিশু সাজেদা ও নুরুল হুদা। দিন দিন না খেয়ে জাহেদার বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে। বাজারের দুধ কিনতেও টাকা নেই। খুব বিপাকে পড়েছে দুই যমজ শিশুকে নিয়ে। বুকের দুধ ও পানি দিয়ে কোন রকমে শিশুদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ক্ষুদায় অনবরত কাঁদলেও চেয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই জাহেদার।
এদিকে অপর একটি পরিবারে ৫০ দিন বয়সী দুই শিশু হাসান ও হোছনকে নিয়ে আরো বিপাকে মাহমুদা খাতুন। সে মংডুর নয়াপাড়া গ্রামের মোঃ ইলিয়াছের স্ত্রী (২৩)। দুই শিশু পুত্রের দেখা দিয়েছে পুষ্টিহীনতা। ক্ষুধায় হাউ মাউ করে অনবরত কাঁদছে। এ অবস্থায় কোলে নিয়ে শিশুদের দুধ খাওয়াচ্ছে মাহমুদা খাতুন। কিন্তু কিছুতেই তাদের কান্না থামছেনা। মাহমুদার সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাখাইনের সহিংসতা শুরুর এক সপ্তাহ আগে হাসান ও হোছনের জম্ম হয়েছে। সেনাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে পরিবারসহ গত ৫ সেপ্টেম্বর ছোট দুই শিশুকে নিয়ে এপারে আশ্রয়ে আসে। ত্রাণ পেলেও শিশুদের জন্য কিছু পায়নি।
বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়েছে দুই পরিবারের যমজ শিশুগুলো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছিন্ন অবস্থায় মাটিতে যেন তেন ভাবে রাখা হয়েছে। গায়ে প্রচুর জ্বর এসেছে। ডাক্তারও দেখায়নি। প্রচন্ড গরমে পলিথিনের চাউনিতে অতিষ্ট ও হাঁপিয়ে উঠেছে শিশুরা। এভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বস্তীতে পড়ে রয়েছে দুই পরিবার ও তাদের যমজ শিশুগুলো। এইসব শিশুদের প্রতি আলাদা ভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া না হলে যে কোন সময় ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার সম্ভাবনা করছেন রোহিঙ্গারা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।