বিদেশ ডেস্ক:
রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শতাধিক রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, রাখাইনে অনেক নারী ও শিশু রোহিঙ্গকে হত্যা করতে সামরিক সিস্টেমেটিক অভিযান চালিয়েছে সেনাসদস্যরা। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ও দেশটির উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছেও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার সময় থেকে এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে। প্রায় ১২০ প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি, স্যাটেলাইটের তথ্য-উপাত্ত, ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে বিস্তারিত ও ব্যাপকভিত্তিক বিশ্লেষণে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।

২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচকে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। কক্সবাজের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলেই প্রতিবেদন তৈরি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

নিজেদের কাছে শক্তিশালী তথ্য-প্রমাণ রয়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু সিস্টেমেটিক হামলার শিকার হয়েছে এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নিয়ে সংস্থাটি জানায়, মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশের ৩৩ লাইট ইনফ্যান্ট্রিও গ্রামগুলোতে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলো। জড়িত ছিলো বৌদ্ধদের উগ্রবাদী চক্রও।

অ্যামনেস্টির গবেষক ম্যাথিউ ওয়েলস বেশ কিছুদিন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করেছেন। তিনি বলেন, তারা কয়েকমাসের মধ্যে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে যেখানে জড়িতদের ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে তথ্য উল্লেখ থাকবে।

তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা করে ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে পালিয়ে যাওয়ার সময়ই তাদের পেছন থেকে গুলি করা হয়। ওয়েলস জানান, স্যাটেলাইট ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পেরেছেন রোহিঙ্গাদের বাড়ি, মসজিদসহ পুরো গ্রামই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছিলো যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অ্যামনেস্টির মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক লরা হাইগ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের যেসব তথ্য-প্রমাণ তারা নথিভুক্ত করেছেন, তা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে করা দেশটির সেনবাহিনীর নির্যাতনের সঙ্গে তুলনীয়। কাচিন, শান ও পালংসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও তারা একই ধরনের অপরাধ করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা সিস্টেমেটিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের মতে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।