ডেস্ক নিউজ:
নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি আস্থায় নিতে আরও সময় নেবে বিএনপি। সিইসির মুখে জিয়াউর রহমানের প্রশংসা এবং দলের মহাসচিব ‘কিছুটা আশাবাদী’ বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত অর্থে ইসি’র স্বাধীন ও মুক্ত ভূমিকা দেখতে চায় দলটি। পাশাপাশি বিগত শামসুল হুদা ও রকিব কমিশনের সংলাপে না গেলেও বর্তমান ইসি’র গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকায় দলটি সংলাপে সাড়া দিয়েছে। এখন সিইসি’র সদিচ্ছা আর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে বিএনপি’র বর্তমান ইসি’তে পুরোপুরি আস্থা রাখার বিষয়টি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘সিইসির মুখে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার প্রশংসা, সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আন্তরিক ব্যবহার দেখা গেলেও আগামী নির্বাচনে ইসি’র ভূমিকা এতে পরিষ্কার হয় না। সিইসি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকার সম্পর্কে কিছুই বলেননি। এতে করে পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।’ ফলে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দেওয়া প্রস্তাবগুলো কতটা গৃহীত হয়, সেদিকেও নজর রাখবে বিএনপি।
১৫ অক্টোবর সংলাপ শেষে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ইসির পক্ষ থেকে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘আলোচনার শেষ দিকে এসে তারা বিএনপি’র প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করবেন। নিজেদের মধ্যে বসবেন, বসে দেখবেন, তারা কী করতে পারেন।’
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সংলাপ দিয়ে কেবল আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে, অন্যান্য দলও দিয়েছে। সেক্ষেত্রে কমিশনের পরবর্তী ভূমিকাই বলবে, তাদের আস্থায় নেওয়া যায় কিনা।’
স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এটা তো সূচনা মাত্র। বিস্তারিত বলার সময় আসেনি।’
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো আস্থা তৈরির জন্যই সংলাপে গিয়েছি। সিইসি শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার সাফল্যের বিষয়ে বলেছেন, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি কিন্তু একটা কথাও বলেননি। ফলে, তিনি যখন বর্তমান সরকার, প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলবেন, তখনই বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। সংলাপের দিন তার ব্যবহার, আচরণ আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। সে জন্যই ওইদিন (১৫ অক্টোবর) মহাসচিব আশাবাদের কথা বলেছেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের পর ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর। এই ১৬ বছরে বিএনপি বিগত দুই কমিশনে সংলাপের আমন্ত্রণ পেলেও অংশ নেয়নি। ২০১১ সালের জুনে তৎকালীন সিইসি এটিএম শামসুল হুদা কমিশন বিএনপি’কে সংলাপের বিষয়ে তিনবার চিঠি দেয়। এর মধ্যে সংলাপে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে দু’বার চিঠি দিলেও বিএনপি সাড়া দেয়নি। ওই বছরের জুনে কমিশনকে চিঠি দিয়ে দলটি তাদের অনাস্থার কথা জানিয়ে সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ কমিশনের সংলাপে যায়নি বিএনপি। এই কমিশনের সংলাপকে ‘অকার্যকর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে চিঠি দিয়েছিলো দলটি।
এছাড়া, ২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর ইসি গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত প্রস্তাব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর কয়েক দফায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় বঙ্গভবনে। পরে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে ইসি গঠন ইস্যুতে আলোচনার জন্য বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে লিখিত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বিএনপি স্বীকার না করলেও রাজনৈতিক মহলে প্রচার আছে, রাষ্ট্রপতির নিয়োগ পাওয়া কমিশনারদের মধ্যে একজনের নাম বিএনপির লিস্টে ছিল।
বিএনপি সূত্র জানায়, বর্তমান ইসি’র গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার কারণেই হুদা কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শুরু থেকে ইতিবাচক ছিল বিএনপি। গত ১৫ অক্টোবর রবিবার অনুষ্ঠিত সংলাপে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয় এবং প্রত্যেক সিনিয়র নেতাই আলোচনা করেন। এমনকি প্রস্তাবিত ২০ দফা পড়ে শোনানোর পর সিনিয়র নেতারা প্রত্যেকেই আলোচনা করেছেন। গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার কারণে ইসি’র সংলাপ এড়িয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে চায়নি বিএনপি। এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এখন বিতর্ক হলে সেটি পুরোপুরি ইসি’র কাঁধেই বর্তাবে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি যে, শুধুমাত্র আইন-কানুনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। পদ্ধতির মধ্যে থাকলেই হবে না। সরকারের সঙ্গে স্বাধীন চিন্তা নিয়ে কথা বলতে হবে। আর এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে হলে কিছুই হবে না।’
জবাবে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেছিলেন, ‘বিএনপি ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে যেগুলোতে ইসি’র করণীয় রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে হেলালুদ্দীন এও বলেছিলেন, ‘আমরা যে সংলাপ করছি, আলোচনার প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। আগামীতে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’
ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিবের বক্তব্যেই পরিষ্কার আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এক্ষেত্রে আরও সময় নেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আরও বাকি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আচরণ ও ইসির ভূমিকাই বলে দেবে বিএনপি’র কী করণীয়।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।