ডেস্ক নিউজ:
মা-বাবা চান ছেলে ডাক্তার হোক, আর ছেলে চায় অন্য কিছু হতে—এসব সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসে ইউসুফের সংগঠন রিফ্লেক্টিভ টিনস। পাশাপাশি গ্রামের ছাত্রদের মান উন্নয়নে কাজ করে তাঁর আরেক সংগঠন ওয়াইএম-ফর বেটার লাইফ।

ইউসুফের এক বন্ধু, যাকে ক্লাসে প্রায় সময় দেখা যেত দারুণ সব জিনিস আঁকছে, একদিন দুঃখ করে বলল, ‘আমি আঁকিয়ে হতে চাই জেনে বাবা খুব খেপেছে। তিনি আমাকে ডাক্তার বানাতে চান।

’ একটু থেমে আবার শুরু করল, ‘বাবা বলল, আঁকিয়েদের নাকি ভবিষ্যৎ নেই। আচ্ছা দোস্ত, তুই বল, আমি যদি আমার পছন্দের বিষয়েই কাজ করে যাই তাহলেই আমার সেরাটা দিতে পারব, ভালো কিছু করতে পারব। ’ তাঁর জবাব ছিল, ‘মা-বাবারাও চান আমরা সুখে থাকি। নিজেদের স্বপ্নের কথা একটু সময় নিয়ে বুঝালে অবশ্যই তাঁরা বুঝতে পারবেন। ’ সেই ঘটনাটি খুবই নাড়া দেয় ইউসুফের মনে। সেদিনের পর থেকেই এসব নিয়ে ভাবতে শুরু করেন ইউসুফ। এসব সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে গড়েন ‘রিফ্লেক্টিভ টিনস’ সংগঠন। কয়েক দিনের মধ্যে বেশ সফলতাও আসে। বদলে দিয়েছেন অনেক পরিবারের ভুল সিদ্ধান্ত।
পুরো নাম ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব। তিনি বলেন, ‘মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যস্থতা করে ও তাঁদের মধ্যে বোঝাবুঝির একটা সেতু গড়ে দেয় রিফ্লেক্টিভ টিনস। ’

রিফ্লেক্টিভ টিনসের একটি জরিপ বলছে ৮৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের ব্যাপারে তাদের মা-বাবা সরাসরি প্রভাবিত করে। ফলে নিজেদের চাওয়া তারা হারিয়ে ফেলে। এতে তারা হতাশা, মাদকাসক্তি, অন্তর্জালের মোহ, মা-বাবাকে অপছন্দসহ নানা সমস্যার মুখে পড়ে।

আরেকটি জরিপ বলছে, কিশোর বয়সে সহশিক্ষায় (যেমন গান, নাচ, ছবি আঁকা, আবৃত্তি) জড়িত থাকলে কর্মজীবনে অন্যদের তুলনায় ৮৭ শতাংশ বেশি প্রোডাক্টিভ হয়। এ থেকে বোঝা যায় ছেলেবেলায় সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকা জরুরি। এটি শুধু তাদের মনই ভালো রাখে না, মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে। এসব নিয়ে বছরে পাঁচ ধাপে কাজ করে রিফ্লেক্টিভ টিনস। সংগঠনের সদস্যরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কাজগুলো করেন। এখন কাজ করছেন ২২ জন। এই সংগঠনের ওয়েবসাইটে (www.reflectiveteens.com) টিন-এজাররা সৃজনশীল কাজগুলো পাঠাতে পারে। রিফ্লেক্টিভ টিনসের ওয়েব ম্যাগাজিন সেকশন সেগুলো রিভিউ করে প্রকাশের ব্যবস্থা করে। এখানে রয়েছে ‘টিন সাপোর্ট ডেস্ক’। যেখানে অভিজ্ঞ পরামর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া যায় প্রশ্নের সমাধান।

ওয়াইএম-ফর বেটার লাইফ নামে আরেকটি সংগঠন আছে ইউসুফের। এ সম্পর্কে ইউসুফ বলেন, ‘ফাইভ পর্যন্ত গ্রামে পড়াশোনা করেছি। ফলে শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষ কোন কোন দিক দিয়ে পিছিয়ে, সেগুলো আমার কাছে স্পষ্ট। সেসব সমাধানের জন্য গত বছর এই সংগঠন করি। এর মধ্যে এই সংগঠনের কাজও শুরু হয়ে গেছে।

শুধু নিজের সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত নন ইউসুফ, পাশাপাশি সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন আশোকা বাংলাদেশ নামক আরেকটি সংগঠনে। সংগঠনের কাজে মাঝেমধ্যে গ্রামে যেতে হয়, স্কুলে গিয়ে বক্তৃতা করতে হয়। ১ সেপ্টেম্বর ১৮টি দেশের কিশোরদের নিয়ে নেপালের কাঠমান্ডুর সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় একটি কনফারেন্স করে গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে স্পিকার ছিলেন ইউসুফ। এসব কাজ ও পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন। তাঁর প্রিয় বিষয় বিজ্ঞান।

তাঁর এসব কাজের পেছনে পরিবাবের সমর্থনের বিষয়টি জানতে চাইলে ইউসুফ বলেন, ‘শুরুর দিকে সমর্থন ছিল না। কিন্তু যখন দেখল, তাদের ছেলে আসলেই ভালো করছে, দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ডাক পাচ্ছে তখন তারা ধীরে ধীরে এসব নিয়ে বুঝতে শুরু করে। ’ বন্ধুদেরও পাশে পেয়েছে ইউসুফ। উৎসাহ দিয়েছে, সাহায্য করছে। শিক্ষকরাও সমর্থন দিয়েছেন। কলেজিয়েট স্কুলের সে সময়ের প্রধান শিক্ষক আজিজ উদ্দিন খুব সাহায্য করতেন।

নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে ইউসুফ জানান, ‘সব কিছুর ওপরে আমি আমাকে ডিফাইন করি চেঞ্জমেকার হিসেবে। সেটা যেকোনো ক্ষেত্রে হতে পারে। মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে, সবার ভালোর জন্য, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচয় করানোর লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই। ’

–কালের কণ্ঠ