সোয়েব সাঈদ, রামু:
নিরীহ মানুষকে হত্যা ও নারী-শিশুকে ধর্ষন-নির্যাতন চালিয়ে বিশ্বের কোন শাসক সফল হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজারকুল পাঞ্জেখানা স্টেশনে উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ উপহার সংগ্রহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এমপি কমল এসব কথা বলেন।
রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের মুফিজুর রহমান মুফিজের সভাপতিত্বে সভায় কমল বলেছেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে বিশ্ববাসী স্বোচ্ছার হয়েছে। বিক্ষোভ প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। রাখাইন রাজ্যে মুসলিমদের উপর বর্বর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের রক্তে আরাকানের সবুজ জমিন এখনো রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে, লাল হয়ে যাচ্ছে নাফ নদীর পানি। ভেসে উঠছে রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাক্ষুসে অং সান সুচিকে এ বর্বরতার জন্য কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি জাতি সংঘ সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে রোহিঙ্গা নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করা এবং মায়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
এমপি কমল বলেন, ইতিপূর্বে রামুসহ দেশ বিদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে ত্রাণ দিয়েছি। কিন্তু এবার রোহিঙ্গাদের জন্য আমি নিজেই জনতার কাছে ত্রাণ চাইতে এসেছি। সরকার, এনজিও এবং আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও দেশ সমূহের ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও সব ত্রাণ এখন আসছে না। তাই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে বাঁচাতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গারা অসহায়। তাদের সহায়তা করা মানবিক দায়িত্ব। যুগ যুগ ধরে তারা মায়ানমারে অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর সময় পার করছিলো। অতীতের মতো সাম্প্রতিক যে নির্যাতন হয়েছে তা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। নির্মমতার চরম সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান যেমন জরুরী, মানুষ হিসেবে তাদের বাঁচানোও জরুরী। এজন্য রোহিঙ্গাদের এখন বেশী বেশী ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং সর্বস্তুরের মানুষ রোহিঙ্গাদের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলো। এখন সেই ত্রান ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী ত্রান আসতেও বিলম্ব হচ্ছে। এ দায়িত্ববোধ থেকে রামুবাসী সম্মিলিতভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রান সংগ্রহ কার্যক্রম চালাচ্ছে। মানবিক এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কক্সবাজারের শ্রেষ্ট সমাজসেবক হিসেবে ভূষিত হয়েছিলেন, সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত মরহুম আলহাজ¦ ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী। তাঁর উত্তরসুরি হিসেবে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল মানুষের কল্যাণ ও সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করছেন। অসহায়-নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য রামুবাসীর সম্মিলিত ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম সাংসদ কমলের একটি অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য রামুবাসীর ত্রান সংগ্রহ ও প্রদানের উদ্যোগ একটি সময়োপযোগি পদক্ষেপ। কক্সবাজারের মাটি ও মানুষের প্রিয় নেতা এমপি কমল অতীতের মতো এবারও মানবিক বিপর্যয়ে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ত্রান সংগ্রহ কার্যক্রমে রামুবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে। এভাবে ত্রাণ সংগ্রহ অব্যাহত থাকলে কদিন পরেই রামু থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য রেকর্ড পরিমান ত্রাণের বহর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেয়া সম্ভব হবে।
রাজারকুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাশেকুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হক কোম্পানী, চাকমারকুল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার, ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, আওয়ামীলীগ নেতা মাস্টার ফরিদ আহমদ, রামু উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নীতিশ বড়ুয়া, আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ মো. আবদুস শুক্কুর, জেলা যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান, যুবলীগ নেতা নবীউল হক আরকান, উত্তম মহাজন, রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য যথাক্রমে সরওয়ার কামাল, সাহাব উদ্দিন, রিটন বড়ুয়া, শামসুল আলম, ছৈয়দ নুর হোছাইন, আঙ্গুর প্রভা বড়ুয়া, আসমাউল হোসনা, আল্পনা শর্মা, পাঞ্জেখানা বাজার কমিটির সভাপতি জহির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মিন্টু বড়ুয়া, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাফর আলম, আওয়ামীলীগ নেতা মতিউর রহমান, রাজারকুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হক, নুরুল আলম প্রমূখ।
আগেরদিন শনিবার (১৪ অক্টোবর) রামু উপজেলার খুনিয়াপালং এর ধেছুয়াপালং স্টেশনে খুনিয়াপালং ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ উপহার সংগ্রহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল গনি। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আবদুল মাবুদ।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ ভূট্টো, বঙ্গবন্ধু সৈনিকলীগ কক্সবাজার জেলা সভাপতি তৈয়ব উল্লাহ মাতব্বর, রামু উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নীতিশ বড়–য়া, আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ মো. আবদুস শুক্কুর, জেলা যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান, যুবলীগ নেতা নবীউল হক আরকান, উত্তম মহাজন, আওয়ামীলীগ নেতা কবির আহমদ, ছৈয়দ আহমদ, মোস্তাক আহমদ, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ এমইউপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, ইউপি সদস্য সুলতান আহমদ ও মো. কামাল, আওয়ামীলীগ নেতা হাজ¦ী ছাব্বির আহমদ, রমিজ আহমদ, আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহিম, আবদুল করিম, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ওলামালীগ সভাপতি মাওলানা আবদু শুক্কুর, আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ¦ ফরিদ আহমদ, হোছন আহমদ সওদাগর, ঠান্ডা মিয়া, ছৈয়দ উল্লাহ, রশিদ আহমদ, রশিদ উল্লাহ, খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, তারেক হোসেন, ছৈয়দুল হক প্রমূখ।
এসব সভায় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ও উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলমের নেতৃত্বে অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য রামুবাসীর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে উপহারসামগ্রী প্রদানে সকলের অংশগ্রহন ও সহযোগিতা কামনা করা হয়। রামুবাসীর কাছ থেকে সংগ্রহ করার পর এসব উপহার নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে প্রদান করা হবে। সভায় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, সৈনিকলীগ, তাঁতীলীগ, বাস্তুহারালীগ নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তুরের শত শত জনতা উপস্থিত ছিলেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।