আমাদের সময়:
চট্টগ্রামে একের পর এক খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তারা এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে হতাশা ব্যক্ত করে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে বলেন, জাতিসংঘ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন হিমালয় সমান ইমেজ নিয়ে দেশে ফেরেন, সেদিন আমরা এই আনন্দ উদযাপন করতে পারিনি। চট্টগ্রামবাসী সারাদিন সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা নিয়ে শোকে বিহ্বল ছিল। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তাকে জানিয়েছি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে দলের ইমেজকে বাঁচাতে চাইলে সরকারের জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ চাই।
গত ৬ অক্টোবর নগরীর নালাপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের প্রহার ও ছুরিকাঘাতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস খুনের পর মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। শুরুতেই দলীয় কোন্দলে সুদীপ্ত খুন হয়েছেন এবং প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করে আসছে ছাত্রলীগ। কিন্তু ঘটনার নয়দিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, সুদীপ্ত বিশ্বাসের খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখন বুঝতে পারছি প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদেরের চেয়ে ক্ষমতাবানদের হাতে সুদীপ্ত খুন হয়েছেন।
এদিকে সুদীপ্ত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে লালখানবাজার এলাকায় পুলিশের অভিযান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা এসেছে যে, খুনিরা লালখানবাজার এলাকায় অবস্থান করে। সুদীপ্তকে খুন করতে লালখানবাজার এলাকা থেকে ১১টি সিএনজি অটোরিকশা ও তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্বৃত্তরা নালাপাড়া যায় বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। ওই ঘটনায় লালখানবাজার এলাকার অন্যতম শীর্ষসন্ত্রাসী মইনউদ্দিন হানিফ ওরফে পিচ্চি হানিফ জড়িত বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে। হানিফ বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও দুটি হত্যা মামলা রয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল নগরীর লালখানবাজার হাইলেভেল রোডে শরীফ ওরফে টেম্পো শরীফকে খুন করার অভিযোগে পুলিশ হানিফকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ রয়েছে, জামিনে বের হয়েই পিচ্চি হানিফ সুদীপ্ত বিশ্বাসকে খুনের নেতৃত্ব দেয়। সাধারণ রিকশাচালকের ছেলে পিচ্চি হানিফ নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করে। লালখানবাজার ও হাইলেভেল রোডের ফুটপাতে কয়েকশ দোকান বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। এ ছাড়া লালখানবাজার এলাকায় যত জমি বিক্রি ও ভবন নির্মাণ হয়, তার প্রতিটি থেকেই হানিফকে চাঁদা দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন। জানা যায়, লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম মাসুমের সঙ্গে পিচ্চি হানিফের সুসম্পর্ক রয়েছে।
সুদীপ্ত হত্যার একই দিনে নগরীর আকবর শাহ এলাকায় জয়দাশ নামের একজন প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন। তার আগের দিন চান্দগাঁও থানার বিসিক শিল্প এলাকায় দুই ভাইয়ের লাশ পাওয়া যায়। পরদিন ৭ অক্টোবর নগরীর ডবলমুরিং এলাকায় মোহাম্মদ ইমন (২৬) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।
জানা যায়, গত রোজার ঈদের পুরো সময়ই কেটেছে ছিনতাইকারীদের উৎপাতে। এই সময়ে আমেরিকার একজন অধ্যাপিকাও ছিনতাইকারীদের হাতে নগদ অর্থ, ক্রেডিট কার্ড, নিজ দেশের পরিচয়পত্র ও ল্যাপটপের মতো মূল্যবান জিনিসপত্র হারান। এর মাসখানেকের মধ্যে চৌমুহনী এলাকায় চীনা দম্পতি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। পরে ওই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা গেলেও ছিনতাই হওয়া মূল্যবান কোনো কাগজ কিংবা জিনিসপত্র পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে পুলিশের বিরুদ্ধে উল্টো লোকজনকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আসছে হরহামেশা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন ওসি ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ করে থানার ওসি হচ্ছেন। তিনি ওই টাকা তুলতে গিয়ে নিকাহনামা সম্পাদনের সঙ্গে জড়িত নিরীহ কাজী পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেন না। তা হলে সাধারণ মানুষের যাওয়ার জায়গা আর কোথায় থাকল।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোছাইন আমাদের সময়কে বলেন, সুদীপ্ত হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুদীপ্তকে হত্যা করার আগে ঘাতকরা বৈঠক করে লালখানবাজার এলাকায়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার পরিচয় পাওয়া গেছে। এটি কোনো ব্যক্তিগত ঘটনা নয়। চট্টগ্রামের এক শীর্ষ নেতার নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে।