কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া:
বাবা -মা নেই। মগ সেনারা মেরে ফেলেছে।জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৪ বড়বোন ও ২ভাই। গত ৫ অক্টোবর নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয় বাবা শামসুল আলম (৪০) ও মাতা রমিদা বেগম (৩৫) কে। ফলে ৬ ভাই -বোন এতিম হয়ে পাড়ালিয়া লোকদের সাথে পালিয়ে আসে জান্নাত আরারা। মিয়ানমারের বলি বাজারে ছিল তাদের বসতবাড়ি। ৫ অক্টোবর জান্নাত আরাদের সকলেই বাংলাদেশ মুখী হয়ে রওয়ানা দেয়। পথিমধ্যে আকস্মিক মগ সেনাদের সামনে পড়ে যায়। বাবা -মাকে টেনে হেছড়া করে বন্দুকের বাট দিয়ে বিক্ষিপ্ত আঘাত করে নিয়ে যায়। তাই জীবন বাচাঁতে জান্নাত আরা (৮), বড় ভাই মোঃ ইউনুছ (২০), বিবাহিত বোন সুপাইরা (১৮), ভাই মোঃ কালু (১৪), বোন নুর কায়েদা (১২), শফিকা (১০) সহ ৬জনই ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্ট দিয়ে ওপারে ২দিন পাহাড়ী ও জলপথ বেয়ে এপারে পালিয়ে আসে। আশ্রয় নিয়ে বস্তি গড়ে তুলেছে বালুখালীর জুমের ছড়া এলাকায়। গত ৬ দিন পুর্বে এপারে এসেছে জান্নাত আরা রা। চোঁখে -মুখে হতাশা আর বিষণ্ণতার চাপ, অপলক চাহনী জান্নাত আরার। অসহায়ত্ব যে কারো মন নাঁড়া দেবে জান্নাত আরা কে দেখে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় জান্নাত আরা কক্সবাজার -টেকনাফ সড়কের ধারে একা বসেছিল কারো দয়া ও করুণার আশায়। মাঝে – মধ্যে ঘুরাঘুরি এ দোকানে ও দোকানে। তেমন একটা কথা বলেন না। জিজ্ঞেস করলেই উত্তর মেলে। জান্নাত আরার মায়াবী চেহারা ও অসহায়ত্ব মুখ দেখেই জিজ্ঞেস করা হলে বাবা -মা কে মগ সেনারা কিভাবে হত্যা করেছে, কিভাবে এপারে পাড়ি দেয় তার বর্ণনা দেয়। অন্য ভাইবোন কোথায় প্রশ্ন করতেই বলে বড়বোনরা বস্তিতে, ভাইরা ত্রাণের আশায় ছুটাছুটি করছেন। সকালে কি খেয়েছো জিজ্ঞেস করলে বলে, এখনো ভাত খাইনী! লোকজনের দেয়া নাস্তা পানি খাইছি। সত্যিই হৃদয়স্পর্শী ঘটনা জান্নাত আরাদের। আত্মীয়স্বজন বলতে যারা আছে, তারাও একেক পরিবার একেক স্থানে। জান্নাত আরা জানে না তাদের ভবিষ্যৎ কি?। বাবা -মা কি আর ডাকতে পারবে? না। এরপরও ভাইদের সাথে জীবন সংগ্রাম একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। প্রসঙ্গতঃ গত ২৫ আগস্ট পরবর্তী রোহিঙ্গা শ্রোতাদের বাংলাদেশ মুখী হলেও জান্নাত আরাদের পরিবার শুরুতেই আসেনি। হয়তো পরিস্থিতি শান্ত হবে এ আশায় মিয়ানমারের বলি বাজারে বসতবাড়িতে থেকেই গিয়েছিল। ফের মগ সেনাদের নির্যাতন, দমন নিপীড়ন শুরু হলে পালিয়ে প্রান রক্ষায় এপার মুখী পথেই প্রান কেড়ে নেয় বাবা -মায়ের, এমনই বিষাদের বর্ণনা মুখে আনতেই জান্নাত আরার চোঁখের জল ছল ছল করছিল।