ডেস্ক নিউজ:
শুক্রবার সকালে রাজধানীর সব রাস্তা প্রায় ফাঁকা থাকলেও ফার্মগেইটে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে তো পা রাখার জায়গাই ছিলো না। ইনস্টিটিউশন থেকে বিজয় সরণি মোড় পর্যন্ত ডাবল লাইন, অপর লাইন ফার্মগেট পুলিশ বক্স পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এসব লাইনে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও ছিলেন।
কেউ লাইনে দাঁড়িয়েছেন সকাল ৭টায় কেউবা পরে এসে দাঁড়িয়েছেন। কেউ এসেছেন বাজারের ব্যাগ হাতে, কেউবা বালতি, ছোট ছোট কার্টন নিয়েও লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। যেসব মানুষ বাসে চড়ে এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের কৌতুহলি চোখ লাইনে দাঁড়ানোদের দিকে। তাদের প্রশ্ন কেন মানুষ বিভিন্ন কিছু (পাত্র জাতীয়) নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো? মানুষের এ ভিড়ের কারণ সস্তায় ডিম কেনা।
শুক্রবার পালিত হলো বিশ্ব ডিম দিবস। বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও একযোগে পালিত হলো দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে খামার বাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিশেষ ছাড়ে ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় ১২ টাকায় এক হালি ডিম কিনতে পারবেন ক্রেতারা। সে হিসেবে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়বে ৩ টাকা। তবে সময় মাত্র ৩ ঘণ্টা। অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা এ ৩ ঘণ্টা মেলা চলবে বলে আগেই জানানো হয়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৯০টি ডিম কিনতে পারবেন।
সকাল ৯টায় মানুষের লাইন আরও দীর্ঘ হয়। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার পরিস্থিতিই নেই বললেই চলে। দীর্ঘসময় মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বেলা ১১টা পার হলেও বিশেষ দামে ডিম বিক্রির কোনো লক্ষণই দেখেনি লাইনে অপেক্ষমানরা।
তাই ক্ষোভে রাগে বিরক্তি প্রকাশ করতেই হঠাৎই মানুষের ধাক্কাধাক্কি, হৈ চৈয়ে ভেঙে পড়ে ডিম বিতরণের অস্থায়ী মঞ্চ, নষ্ট হয় অনেক ডিমও। ডিম কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ লোকজন এক পর্যায়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠি চার্জ করে।
এর আগে সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে ১২ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালায় আয়োজকরা। তবে কম দামে ডিম বিক্রির আয়োজনটি প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে ভণ্ডুল হয়ে গেছে। অনেকে পুলিশের পিটুনি খেয়েছেন। এজন্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন ক্রেতারা। ডিম কিনতে না পেরে অনেক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে আয়োজকরা প্রাতারণা করেছে। ডিম বিক্রির নামে এসব নাটক, ভণ্ডমি ছাড়া আর কিছু নয়।
মিরপুর থেকে ডিম কিনতে এসেছে আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ১২টাকা হালি দরে ডিম নিতে সকাল ৭টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রায় ৪ ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। এক পর্যায়ে মানুষ অধর্য হয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠ চার্জ করে। যেহেতু সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি তাই প্রথম দিকেই ছিলাম। সস্তায় কিনতে এসে ডিমের বদলে খেলাম পুলিশের লাঠি পেটা। আয়োজকরা আমাদের সঙ্গে প্রাতারণা করেছে। আসলে ডিম বিক্রির চেয়ে প্রচারণাই ছিলো তাদের মূল বিষয়।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা এসেছেন আজিমপুর থেকে। তিনি বলেন, কম দামে ডিম নিতে এসে পুলিশের লাঠি পেটা খেয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ডিম পেলাম না। এমন ব্যর্থ আয়োজনের জন্য আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল-বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ডিম পাব কি পাব না এ আশংকায় বিশৃঙ্খলা শুরু হলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ফলে উদ্যোক্তারা ডিম দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। আমরা চেয়েছিলাম সবাই যেন কম দামে ডিম কিনতে পারেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, তবে পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে হ্রাসকৃত মূল্যে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। শিগগিরই রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে ৩ টাকা দরে ডিম বিক্রি হবে। তবে যা হয়েছে এ জন্য আমরা দুঃখিত।
হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রিতে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে বর্তমান নাগরিক জীবনে তার প্রভাব পড়েছে। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে যার চিত্র এ ঘটনার মাধ্যমে আরও পরিস্কার হলো। কারণ দ্রব্যমূল্যো ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে । কিন্তু সস্তায় ডিম বিক্রির নামে যারা প্রতারণা করলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের প্রতারণা বিষয়ে আমারা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।