কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের সন্তানের সংখ্যা বেশি। প্রতিটি পরিবারে ৫ থেকে ১০টির মতো সন্তান রয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া অনেক নারী এখন গর্ভবতী। স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাদের এ অবস্থা। বাংলাদেশে আসার পর এসব নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে। গড়ে তোলা হচ্ছে সচেতনতা।কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফর জানায়, কক্সবাজারের প্রত্যেকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, খাবার বড়ি এবং কনডম দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রচারণা চালাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। এই পর্যন্ত ১১শ’ ৮০ জন নারীকে ৩ মাস মেয়াদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ানো হয়েছে এক  হাজারেরও বেশি নারীকে। ৯শ’র বেশি পুরুষকে কনডম দেওয়া হয়েছে।কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য জানান, মন্ত্রাণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা অধিফতরের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এরমধ্যে উখিয়ায় চারটি ও টেকনাফে তিনটি। এসব টিমে কাজ করার জন্য বিভিন্ন উপজেলা থেকে দুইশ’ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মী ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ সর্ম্পকে জানাচ্ছেন।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, ‘রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ না করাটা মিয়ানমারের সমস্যা বা সে দেশের চিত্র। কিন্তু জনসংখ্যা বহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই চর্চা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিৎকসা সেবাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রেণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটি জরুরি হয়ে পড়েছে।কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত জন্ম নিয়ন্ত্রেণের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।এর আগে যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের কাছে জন্ম নিয়ন্ত্রেণের বার্তা পৌঁছালেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। ফলে বরাবরই রোহিঙ্গাদের সন্তান সংখ্যা বেশি।উখিয়া উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি সোলতান মাহমুদ চৌধুরী জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে এদেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই বলে এই নয় যে জনবহুল দেশে অপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও সচেতন থাকতে হবে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন,‘গত ২৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা ৭ শতাধিক শিশু জন্ম দিয়েছে। আর গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী রয়েছেন ২২ হাজারের কাছাকাছি । তাদের খুব দ্রুত  জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।তবে এ পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা বলা মুসকিল বলে স্থানীয় সচেতন মহল করেন।