আবুল কাসেম আশরাফ 
জ্ঞান হচ্ছে আত্নার খাদ্য।আর আত্নার পুষ্টির জন্য চাই শিক্ষার প্রাচুর্যতা। শিক্ষা মানুষকে ব্যক্তিত্বশীল ও স্বনির্ভর করে তোলে। উচ্চতর জীবনবোধ ও মূল্যবোধের পরিস্ফুটন কেবল শিক্ষার মাধ্যমে সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। বিদ্যার প্রভাবেই মানুষ তার অন্তর্নিহিত শক্তি, দক্ষতা ও কৌশল লাভ করতে পারে।
কিন্তু আজ জ্ঞান – বিজ্ঞান চর্চার শিক্ষানিকেতন গুলো অচল হয়ে পড়ে আছে প্রায় পাঁচ মাস অধিক। চারিদিকে হতাশ ও অস্থিরতা। কোথাও স্বস্থির ছাপ -চিত্র নেই। সামনে কী অপেক্ষা করছে কেউ তা জানেনা। কত শত -সহস্র বা অগনন ভোগান্তি পেরিয়ে একটু খানি শান্তির অবকাশ মিলবে- এই প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে প্রতিটি অলিগলির অসহায় মানুষজন।
ছোঁয়া যায় না, দেখা যায়না, কল্পনার চোখে ও চিত্রায়ণ করা যায়না এমন ক্ষুদ্র জীবাণুর আঘাতে তছনছ বিশ্ব ব্যবস্থা। থমকে গেছে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশও।
কচিদের হাজার হাজার মুক্ত প্রাণে মুখরিত ছিল প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন। যে শিশু কিশোরদের প্রাণ মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াত, আজ সেই মুক্ত প্রাণ গুলো গৃহবন্দী। শিক্ষকদের মাঝে নেই পাঠদানের কর্ম ব্যস্ততা। নেই খুব সকালে বেরিয়ে যাওয়ার প্রাণান্তকর তাগিদ। ব্ল্যাকবোর্ড,বই,  রাইটপেন, চক, ডাস্টার, পেন্সিল সহ সবই পড়ে আছে টেবিলের  ড্রয়ারে। প্রতিষ্ঠান গুলোতে নেই শিক্ষার্থীদের আগমন -প্রস্থানের কোলাহল।
পরিস্থিতির কষাঘাতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অটুট বন্ধন যেন ভুলে না যায় এই আবদ্ধ জীবনের কালো ছোবলে। প্রিয় সহকর্মীরা কেমন আছেন তা জানা নেই।তবে প্রযুক্তির এই যুগে ভি‌ডিও, অডিও কথাবার্তাতে আপাতত স্বান্তনার পরশ বুলানো হচ্ছে অবুঝ হৃদয়াঙ্গনে।
দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে চরম সংকটের দিকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন ব্যবস্থা। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এমনিতে পড়াশোনার ব্যাপারে উদাসীন। শিক্ষকবৃন্দ ও পিতামাতার চাপে কিছুটা পড়ালেখা করে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা আরো অলস হয়ে পড়েছে। জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন বাজে নেশায়। পিতামাতার পক্ষেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। কিশোররা বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিচ্ছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে কিশোর অপরাধ।সেহেতু পিতামাতার সযত্ন তত্বাবধান প্রয়োজন রয়েছে।
তাই শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অনলাইন ক্লাস চালু করছে। কিন্তু তাতে কয়জন অংশ গ্রহণ করছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সেই মানসিকতাও আর নেই। আবদ্ধ থে‌কে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের মেধা বিকাশ। যাই হোক আগে বাঁচতে হবে।
সর্বোপরি এই কোয়ারিন্টন জীবন থেকে মুক্ত আকাশে ফিরে আসুক চিরচেনা সেই পৃথিবী। ফিরে আসুক কর্মময় জীবন ব্যবস্থা ও উৎসব মুখর প্রিয় শিক্ষাঙ্গনগুলো।
লিখক- সহকারী শিক্ষক, খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।
খরুলিয়া, সদর, কক্সবাজার।