সিবিএন ডেস্ক:
বাংলাদেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা বলছে, জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় নতুন রাজনৈতিক জোটে তারা যোগ দেয়নি।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি এবং কয়েকটি ছোট দল জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে নতুন একটি জোট গঠনের কথা ঘোষণা করে। নতুন এই জোটে বিকল্পধারার অনুপস্থিতিতে বিস্ময় তৈরি হয়েছে।

কিন্তু ঐ দলের শীর্ষ একজন নেতা বিবিসিকে বলেন, জামায়াত ইস্যুতে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রশ্নে তারা আপোষ করেন নি বলেই তাদেরকে পাশ কাটিয়ে নতুন ফ্রন্ট ঘোষণা করা হয়েছে।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরই ধারণা, বিএনপি এবং ড. চৌধুরীর বিকল্পধারার মধ্যে সবসময়ই আস্থার অভাব ছিল।

বিকল্পধারা তাদেরকে বাদ দিয়ে ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকটি ছোট দলের সাথে বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রক্রিয়া এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। খবর- বিবিসির।

এই ফ্রন্টে যোগ না দেয়ার বিষয়ে জামায়াত ইস্যুকে সামনে এনেছে বিকল্পধারা।

নতুন জোটে কেন বিএনপি
বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

ভোটের হিসাব নিকাশ এবং নিজ নিজ স্বার্থ থেকে বিএনপি এবং জামায়াত একে অপরকে ছেড়ে দেবে না- এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

ফলে বিএনপি তাদের ২০ দলীয় জোটের বাইরে ঐক্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগিয়েছে।

২০ দলীয় জোটের অন্যদলগুলোকে না নিয়ে বিএনপি এককভাবে ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোটে অংশ নিয়েছে।

ফলে বিএনপি এখন দু’টি জোটেই থাকছে।

এই ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের সাথে বিএনপির ঐক্যের বিষয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিকল্পধারা।

বিকল্পধারার অন্যতম নেতা মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ঐক্য না করা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য আনা- এই দু’টি মূল ইস্যুতে ফয়সালা না করেই নতুন ফ্রন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। এর পিছনে তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন।

“আমরা স্পষ্টভাবে প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি, শুধুমাত্র একটি দলকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। বৃহত্তর ঐক্য হতে হবে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির জন্যে। এবং সেটা হতে হবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাদ দিয়ে। শেষ পর্যন্ত বাকি সবাই হয়তোবা আপোষ করেছে। আমরা আপোষ করি নাই।”

“যেখানে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চক্রান্ত হয়, সেখানে আমাদের যাওয়ার সুযোগ দিলেও তো আমরা যাব না।”

মাহী বি চৌধুরী এবং ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার একটি টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে এবং তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সেখানেও মাহী বি চৌধুরী নতুন ফ্রন্টের পিছনে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে রাজনৈতিক আদর্শগত কোনো ঐক্য হবে না। সেটাতে আমরা খুব স্পষ্ট আছি। তাদের সাথে বিএনপির যদি ঐক্য থাকে, সেটা তাদের ব্যাপার। সেটা এর মধ্যে এনে ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত করার দরকার নেই। শেষ মুহূর্তে একারণেই বিকল্প ধারা চলে গেলো কিনা, সেটা আমরা জানি না।”

এছাড়াও বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় আনার জন্য জাতীয় ঐক্য হতে পারে না বলে বিকল্পধারা যে বক্তব্য দিয়েছে, সে ব্যাপারে মি: মান্নার বক্তব্য ভিন্ন।

তিনি বলেছেন, “নির্বাচনে বিএনপি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়,তাহলে সংসদীয় পদ্ধতিতে বিএনপিই সরকার গঠন করবে, এটাইতো স্বাভাবিক। আমরা বলছি, এই রকম একটা নির্বাচনের বিজয়টা যেনো সবার জন্য হয়, সেটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র নেই। আমরা একটা নির্বাচন চাই।”

যদিও বিকল্পধারা এবং ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ ছোট ছোট কয়েকটি দল বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা শুরু করেছিল, কিন্তু সরকারকে কোণঠাসা করতে ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে থাকা অন্য দলগুলোকে এক মঞ্চে আনার ব্যাপারে বিএনপিরও তৎপরতা ছিল।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, বিকল্পধারার কারণে তাদের সেই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছিল বলে তাদের ধারণা।

তাদের হাতে সময় কম। কারণ নির্বাচন এসে গেছে।

ফলে বিকল্পধারাকে নিয়ে বিএনপিতে অস্বস্তি ছিল। এই দুই দলের মধ্যে সন্দেহ বা আস্থার অভাবের কথাও আসছে।

তারেক-মাহী দ্বন্দ্ব?
সূত্রগুলো বলছে, মাহী বি চৌধুরী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনেক পুরনো দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেটিও অন্যতম একটি কারণ হতে পারে এখনকার পরিস্থিতির জন্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, নতুন জোটের নেতৃত্ব নিয়েও দ্বন্দ্বের কারণেও এমন পরিস্থিতি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

“আমার যেটা ধারণা, ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে ড: কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব বোধ হয় প্রথম থেকেই ছিল। সেটার জেরে বিষয়টা এতদূর এসে পৌঁছেছে।”

নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিকল্পধারা।

মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, শনিবার বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কামাল হোসেনের মধ্যে বিকেল তিনটায় বৈঠক হওয়া কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের কথা বলে ড: হোসেন বাসায় না থাকায় তারা সেই বৈঠকের জন্য গিয়ে ফেরত আসেন।

পরে তাদের না জানিয়ে গোপনে অন্যদলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করে জোটের ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে নতুন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতারা বলছেন, তাদের এই ঐক্যে এখনও বিকল্পধারার আসার সুযোগ রয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের তাতে সন্দেহ রয়েছে।