ডেস্ক নিউজ:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তীব্র খাবার সংকটে রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। যে যেখানে আছে, সেখানেই অবরুদ্ধ হয়েই আছে তারা। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া তো দূরের কথা, সেনা অভিযানের ভয়ে যারা গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে বা পাহাড়ে পালিয়ে গেছে, তারাও নিজ গ্রামে ফিরে যেতে পারছে না। এখনো পর্যন্ত পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য কোনো বেসরকারি সংস্থাকে রাখাইনে কাজ করার অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার। গত মঙ্গলবার রাখাইনের মংডু থেকে পালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত হয়ে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে আসা কয়েক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তারা বলছেন, সরকারি তরফ থেকে কোথাও কোথাও খুবই সামান্য চাল, তেল ও শুকনো মাছ ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে তা রোহিঙ্গা মুসলমানরা পাচ্ছে না, সেগুলো চলে যাচ্ছে সেখানকার মগ সম্প্রদায়ের লোকজনের হাতে।

কথা হয় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে নতুন করে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার সাবেকুন্নাহার, মংডুর মো. সালামসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, পাঁচ দিন আগে বুচিডং এলাকা থেকে রওনা দেন তারা। শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু ছিল তাদের সঙ্গে। একপর্যায়ে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) তাদের আটকে ফেলে। একটি মসজিদের ভিটায় নিয়ে তাদের খাবারও দেয় এবং নিষেধ করে বাংলাদেশে পাড়ি না জমাতে। তারা বিজিপির কয়েকজন সদস্যকে জনপ্রতি ৫ হাজার কিয়েট দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। কিছু মিয়ানমার পুলিশ তাদের পালিয়ে যেতে সাহায্যও করেছে। ওই সব বিজিপি সদস্য বলেছে, বড় কেউ (ঊর্ধ্বতন) জানতে চাইলে তারা যেন কিছু না বলে।
কেন এভাবে পালিয়ে আসছেন? এমন প্রশ্নে রোহিঙ্গা যুবক রমজান আলী জানান, যখন শান্তি ছিল, তখন পাহাড়ে গিয়ে লাকড়ি এনে বাজারে বিক্রি করেছেন; দিনমজুর হিসেবে কোথাও খেটেছেন অথবা মাছের ঘেরে কাজ করেছেন; যা আয়-রোজগার হয়েছে, তা দিয়ে সংসার চালিয়েছেন। এখন ওখানে কোনো কাজ নেই, পাহাড়েও যাওয়া যায় না। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ারও সুযোগ নেই। রমজানের প্রশ্নÑ এ অবস্থায় বাড়িতে বসে থেকে মরব, নাকি পালিয়ে জীবন রক্ষা করব? আরেক রোহিঙ্গা যুবক আবু ছিদ্দিক জানান, ওখানে বাজারে যাওয়া যায় না, কাজকর্ম নেই। জীবন বাঁচাতে এখানে চলে আসা ছাড়া বিকল্প নেই, তাই চলে এসেছেন।

এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্পে এসেও শান্তি নেই। পুরনো শরণার্থীরা তাদের ত্রাণ নিতে দেয় না। তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তেমনি একজন স্বামীহারা রোহিঙ্গা নারী শামসুন্নাহার। তার দুই সন্তান। ৯ দিন হেঁটে গত মঙ্গলবার তুমব্রু সীমান্ত হয়ে পৌঁছেন কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে। তার বাড়ি রাখাইনের বুচিডং এলাকার নাইক্ষংদি গ্রামে। খাবারের আশায় ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে গেলেই পুরনো রোহিঙ্গারা তাকে চেনে না বলে তাড়িয়ে দিতে থাকে। স্বামী কোথায় আছেন, তা জানেন না এ নারী। ত্রাণ পেতে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানান পুরনো কয়েক শরণার্থী।