ইমাম খাইর, সিবিএন:
যে বয়সে খেলাধুলা আর দুষ্টুমিতে ছেলেদের সময় কাটে, সে বয়সে ৩০ পারা পবিত্র কুরআন নির্ভুলভাবে মুখস্থ করা বিশ্বের নতুন বিস্ময়। নজিরবিহীন এমন কাজটি করে দেখিয়েছে সাংবাদিক পুত্র কিশোর ইয়াসিন আরাফাত খান। তাও মাত্র ৮৬ দিনে। সে দৈনিক মুখস্ত করেছে ৭ পৃষ্টা। সাথে একপারা করে পূর্বপাঠের হাজিরাও দিয়েছে। সমান তালে চালিয়ে গিয়েছে ৫ম শ্রেনীর সাধারণ পড়ালেখা। পেয়েছে বৃত্তি। দখল আছে ক্রিড়া-সাংস্কৃতিক ইভেন্টে।
বর্তমানে তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা কক্সবাজার শাখায় ষষ্ট শ্রেনীতে পড়ছে। ওখানেও মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে ‘বিস্ময়কর হাফেজ’ ইয়াসিন আরাফাত। সত্যি এমন মেধা বিরল!
এত অল্প দিনে ইয়াসিন আরাফাত কুরআন শরীফ হেফজ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক কুরআন তেলাওয়াত সংস্থা (ইকরা) এর সহ-সভাপতি বিশ্বজয়ী হাফেজে কুরআন কিংবদন্তি ক্বারী আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
তিনি বলেন, আমি প্রায় ৩৭ বছর ধরে পবিত্র কুরআনের খেদমত করে চলেছি। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছি। কিন্তু এমন প্রতিভা দেখিনি, শুনিনি। এটি সত্যিই বিরল প্রতিভা। ইয়াসিন আরাফাত কক্সবাজারের নয়, পুরো দেশের গৌরব-সম্পদ। মুসলিম জাতির গৌরব। সে অনেক বড় হবে।
তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা কক্সবাজার শাখার অয়োজনে বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে ইয়াসিন আরাফাতকে দেয়া সংবর্ধনায় কথাগুলো বলছিলেন আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বন্ধুদের সঙ্গে ‘বিস্ময়কর হাফেজ’ ইয়াসিন আরাফাত

সাধারণ গল্প-কবিতার শ্লোক মুখস্ত রাখা যেখানে কঠিন সেখানে পবিত্র কুরআনের মতো ভিন্নভাষার একটি গ্রন্থ আত্নস্থ করা আরো বেশী দূরুহ-কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
লওহে মাহফুজের গ্রন্থ পবিত্র কুরআন আদি থেকে অন্তকাল পুরো বিশ্বের জন্য বিস্ময়! সৃষ্টি শুরু থেকে আজ অবধি এই কুরআনের একটি হরফ কিংবা নোকতা কোন শক্তি হেরফের করতে পারেনি। সাধ্যও নেই কারো। যুগে যুগে পবিত্র কুরআন সংরক্ষিত হয়ে আসছে কোটি হাফেজে কুরআনের বক্ষে।
মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সী ইয়াসিন আরাফাত কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষায়ও চমকপ্রদ ফলাফল করে চলেছে। তার পিতা আলহাজ্ব গোলাম আজম খান দৈনিক নয়াদিগন্তের কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা। তার মা আলহাজ সালমা খাতুন গৃহিণী।
পড়াশোনার পাশাপাশি ইয়াসিন আরাফাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক আসরেও প্রথম পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করে।
হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি অনেক ছাত্র পেয়েছি। ইয়াসিনের মতো পাইনি। তার মেধায় জাদুকরি শক্তি আছে। পড়া দেওয়ার সাথে সাথে মুখস্থ করে ফেলে। শিক্ষক ডেকে হাজিরা দেয়। চমৎকার সুশৃঙ্খল, অমায়িক ও মার্জিত হওয়ায় তার প্রতি সবার আকর্ষণটা আলাদা। ইয়াসিনের মেজাজে নেই কোনো রাগডাক। সাধারণ ছাত্রদের চেয়ে ভিন্ন। সাদাসিধে ইয়াসিনের জীবন অনেক সম্ভাবনায় ভরা।

হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুললিত কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করেন বিশ্বজয়ী কিংবদন্তি হাফেজে কুরআন ক্বারী আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। এ সময় আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, সব ছাত্র যখন গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকে, ওই সময়েও উঠে পড়তে দেখেছি ইয়াসিন আরাফাতকে। সবার আগে পড়া হাজিরা দেওয়ার প্রবল জেদ ছিল তার ভেতরে। ছিল না ফাঁকিবাজির চরিত্র। আচরণ ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতো। আমল-আখলাকে পরিপূর্ণ এই ছেলেটি অনেক বড় হবে। তার জন্য অপেক্ষা করছে স্বর্ণালি সময়।
তানযীমুল উম্মাহ হিফজ মাদ্রাসা কক্সবাজার শাখার অধ্যক্ষ হাফেজ রিয়াদ হায়দার বলেন, ক্লাসের হাজিরা খাতা অনুসারে মাত্র দুই মাস ২৬ দিনে (৮৬ দিন) ৩০ পারা কোরআন শরিফ খতম করেছে ইয়াসিন আরাফাত। এখন থেকে যুক্ত হলো ‘হাফেজ’ শব্দ, যে শব্দটি কেনা যায় না। চুরি করেও মেলে না ‘হাফেজ’ সনদ। মেধা-সাধনা দিয়ে নিতে হয় এই সনদ।
রিয়াদ হায়দার বলেন, সাধারণ ক্লাসের পাশাপাশি এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কোরআন হেফজ করার দৃষ্টান্ত এই অঞ্চলের জন্য নজিরবিহীন। পুরো দেশে হয়তো দু-একটা থাকতে পারে। হাফেজ আরাফাত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও পিছিয়ে নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বার্ষিক অনুষ্ঠানে সেই কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছে আরাফাত। সে ভবিষ্যতে বিশ্বমানের হাফেজে কোরআন হবে, ইনশাল্লাহ।
হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল সিফাত কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ইয়াসিনের দাদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মরহুম ডা. মোহাম্মদ ইছহাক খান টেকনাফের সুপরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। নানা আলহাজ ছালেহ আহমদ সৌদি আরবের একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী। তাঁর স্থায়ী নিবাস টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সাতঘরিয়াপাড়া এলাকায়।

হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতকে নিয়ে প্রতিবেদক

এদিকে বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিসিক্ত করে তার শিক্ষক ও সুধীজনেরা।
শহরের খুরুশকুল সড়ক সংলগ্ন তানযীমুল উম্মাহ ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক কুরআন তেলাওয়াত সংস্থা (ইকরা) এর সহ-সভাপতি বিশ্বজয়ী হাফেজে কুরআন কিংবদন্তি ক্বারী আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন-চকরিয়া সাহারবিল আনোয়ারুল উলুম কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা শফিউল হক, ঢাকা মিছবাহুল উলুম কামিল মাদরাসার শিক্ষক ক্বারী মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা দারুল ফজল আলিম মাদরাসার শিক্ষক ক্বারী ফরহাদ হোসেন, কক্সবাজারভিশন ডট কম সম্পাদক আনছার হোসেন, হাফেজ ইয়াসিন আরাফাতের গর্বিত পিতা সাংবাদিক গোলাম আজম খান, কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন) এর বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর। সভা পরিচালনা করেন তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা কক্সবাজার শাখার অধ্যক্ষ হাফেজ রিয়াদ হায়দার।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সমাপনী সবক পড়েন হাফেজ ইয়াসিন আরাফাত।

কম বয়সে বিরল কৃতিত্বের শিক্ষকদের অবদানের কথা স্মরণ করে বক্তব্য রাখে হাফেজ ইয়াসিন আরাফাত। এ সময় সে বিশ্বব্যাপী কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে সবার দোয়া প্রার্থনা করে। শেষ সবকটি পড়ে শুনায় ইয়াসিন আরাফাত।
এ সময় অনুষ্ঠানে চাচা সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানসহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পর্দার আড়ালে ছিলেন তার সফল মা সালমা খাতুন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন আলহাজ্ব ক্বারী আবদুর রশিদ।