বিশেষ প্রতিবেদক:
ডাকাত ও লুটপাট আতংকে ভোগছে কক্সবাজারের চকরিয়ার অধিকাংশ মৎস্যঘের মালিক। শুক্রবার উপজেলার চিলখালী এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ডাকাতদলের ৩ সদস্য আটকের পর ঘের মালিকদের কিছুটা স্বস্তি আসলেও নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে।
র‌্যাব-৭ এর হাতে আটককৃত ডাকাতরা হলেন- চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের পিলখালী এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে আয়ুব আলী (২১), মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আয়াজ (২২) ও আবুল কাসেমের ছেলে আব্দুল হামিদ (২৫)। তাদের কাছ থেকে র‌্যাব উদ্ধার করে ৩০ রাউন্ড গুলি, ৪টি ওয়ান শুটারগান, ৬টি এক নলা বন্দুক ও ৩টি কাটা রাইফেল।
মৎস্যঘের চাষি ও মালিকরা বলেন, প্রতিরাতে আমাদের মৎস্যঘেরে সশস্ত্র ডাকাতেরা হানা দিয়ে মাছ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। মারধর ও গুলিতে আহত হচ্ছে শ্রমিকরা। গত এক বছরে মাছ লুটসহ আমাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে স্বশস্ত্র ডাকাতরা। নতুন করে আবারো ডাকাতদলের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। আমরা এখন আতংকিত ও উদ্বিগ্ন।
মৎস্যঘেরগুলো দখল করার জন্য ডাকাতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, আমরা প্রতি মৌসুমেই জলদস্যুদের কারণে ডাকাতি ও লুটপাটের শিকার হচ্ছি। স্বশস্ত্র ডাকাতরা উৎপাদিত লবণ, মাছ, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। বেপরোয়া অত্যাচার-হুমকীতে ঘের মালিক ও শ্রমিকরা মাঠঘের ফেলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের আশংকা-এসব ডাকাতদের দমন করা না গেলে তারা নদীপথে গিয়ে খুটাখালী বাজারসহ বিভিন্ন বাসতবাড়ী ডাকাতি ও লুটপাট চালাতে পারে। গত সুদিন মৌসুমে উত্তর ফুলছড়ি এলাকা থেকে বিভিন্ন বসতবাড়ী থেকে গরু ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশু লুট করে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, চিহ্নিত ডাকাতদলের মধ্যে অধিকাংশ ডুলাহারা, কাটাখালী, মহেশখালী এলাকার। যাদের প্রত্যেকের হাতে অবৈধ অস্ত্র থাকে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বেশ কয়েকটি অস্ত্র তৈরীর কারখানা। ইতোমধ্যে র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অস্ত্র কারখানা আবিস্কার করেছে।
একটি সুত্রে জানা গেছে, মৎস্যঘেরগুলো পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনা ঘটানোর পাশাপাশি অস্ত্র দিয়ে ঘের মালিকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। শুক্রবার র‌্যাবের হাতে বিপুল অস্ত্রসহ আটক ৩ জন সেই চক্রান্তের অংশ বিশেষ। এর আগে স্বশস্ত্র ডাকাতদলের গুলিতে মোজাফ্ফর আহমদ নামে এক ঘের মালিক নিহত হন। তারও আগে ডাকাত ও লুটকারীদের মারধর-গুলিতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়।
খুটাখালী বহলতলী এলাকার মেদরঘোনা, চিলখালীঘোনা, বাইল্যাঘোনা, উত্তরেরঘোনা, আমলদারীঘোনা, উত্তর বহলতলীঘোনা এলাকায় প্রতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার জমিতে লবন ও মৎস্য চাষ করা হয়। অন্তদ দুই হাজার পরিবার এখানে জড়িত। দেশের লবন ও মাছের চাহিদার বিরাট একটা অংশ এই এলাকা থেকে যোগান দেয়া হয়। মাছ-লবন লুট ও চাঁদাবাজির কারণে মালিক-শ্রমিকদের মাঝে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্বশস্ত্র ডাকাতদলের ভয়ে কাজে যাচ্ছেনা মৎস্যঘের শ্রমিকরা।
এসব মৎস্যঘেরে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত বাড়ার সাথে সাথে তাদের আতংক বাড়তে থাকে। সশস্ত্র ডাকাতরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। জীবন নিয়ে তারা শংকিত। মৎস্যঘেরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান তৎপরতা জোরদার করতে হবে। না হলে এখানকার মৎস্যঘের মালিকরা তাদের ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মৎস্যঘেরে বেশ কয়েকবার ডাকাতি ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতের গুলিতে মারা গেছে এক ঘের মালিক। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। শুক্রবার বিপুল অস্ত্র ও গুলাবারুদসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ডঃ একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, মৎস্যঘেরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা দুঃখজনক। এসব ঘটনায় কারা জড়িত তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।