ডেস্ক নিউজ:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোড ম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত রোডম্যাপের অংশ হিসেবে ইসি ইতোমধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, নিবার্চনকালীন সরকার, অবাধ সভা-সমাবেশের সুযোগ, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে, সে বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এসব দল। ইতোমধ্যে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসিকে পরামর্শ দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে সংলাপে অংশ নিয়েছে ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। প্রতিটি দলই আলাদা প্রস্তাব জমা দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনে। এরমধ্যে সেনা মোতায়েন, নিবার্চনকালীন সরকার, অবাধ সভা-সমাবেশের সুযোগ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত রাখাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব মিল রয়েছে। তবে এসব নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে দলটি নিরপেক্ষ অস্থায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনাসহ ১৫ দফা লিখিত প্রস্তাব দেয় ইসিকে। এই সম্পর্কে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘সংলাপের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করা। প্রস্তাব পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব দল সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব করছে, ইসি যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন কমিশনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। নির্বাচনের সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকবেন, তাদের নিরপেক্ষ থাকা জরুরি। নির্বাচন কমিশন সব কিছু সুন্দরভাবে করলেও নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে আশা করা যায় না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে অতীতের যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো দূর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে ইসকে।’

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ইসলামী আন্দোলন ১৫ দফা সুপারিশ করে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা প্রস্তাব। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনকে আইনের আওতায় আনতে আইন প্রণয়নেরও দাবি জানায় দলটি। এই প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘সংলাপের সময় নির্বাচনের কমিশনকে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, তা তারা শুনেছে। তারা যদি সঠিকভাবে সবার প্রস্তাব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করে, তবেই সবার প্রত্যাশা পূরণ হবে। এক্ষেত্রে সে সময়ের সরকারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সব দলের সমন্বয়ে একটি সমাধান প্রয়োজন। সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘এখন নির্বাচন কমিশন যেসব কাজ করছে, সেগুলো তাদের রুটিন কাজ। এগুলোকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সংলাপের পর তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা। ‍শুধু সংলাপ করে বসে থাকলে সুফল আসবে না। সব দলের প্রস্তাবকে আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি এখন দেখার বিষয়। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যব্স্থা নিয়েও দ্রুত সমাধান জরুরি।’

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। দলটির মহাসচিব নূর হোছাইন কাসেমীর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখছে, সামনে তাদের পদক্ষেপে তা প্রকাশ পাবে। নির্বাচনের সময় কোনও রাজনৈতিক দল বা বিশেষ কোনও দলের অনুগত সরকার ব্যবস্থা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচনে জনগণের অভিমতের প্রতিফলন ঘটাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জরুরি। এজন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থাও জরুরি। আমরা মনে করি, এটির সমাধান হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুর্নবহাল।’

আগামী ১০ অক্টোবর সংলাপে অংশ নেবে ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রস্তাব তুলে ধরব। নির্বাচনের সময় ইসি যেন সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যব্স্থা নিয়ে দলের ফোরামে আলোচনা করে প্রস্তাব দেওয়া হবে।’