আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :

মিয়ানমার দেশটি কি শরণার্থী তৈরির কারখানা? এমন প্রশ্ন ওঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমার ঘিরে থাকা ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, লাউসসহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও যুগ যুগ ধরে ওই দেশের লাখ লাখ শরণার্থীর ভার বহন করে চলেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এ দেশের নির্যাতিত জনগণ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষক মহল মিয়ানমারকে শরণার্থী তৈরির একটি কারখানা হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের সাম্প্রতিক এক হিসাব মতে, মিয়ানমারের শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় বোঝাটি বহন করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশেই রয়েছে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এখনও নতুন নতুন শরণার্থী আসছে। এছাড়া প্রতিবেশী মালয়েশিয়াতে প্রায় ২ লাখ, ভারতে প্রায় ৪০ হাজার, থাইল্যান্ডে ৫ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় এক হাজার রোহিঙ্গা অভিবাসী রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর বাইরে পাকিস্তানে সাড়ে ৩ লাখ, সৌদি আরবে দুই লাখ (কারো মতে ৫ লাখ) ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এসব দেশের বাইরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে বাস করে আরো প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা মুসলিম ছাড়াও মিয়ানমারের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের খৃষ্টান অধ্যুষিত কারেন অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষও এখন থাইল্যান্ড ও চীনের শরণার্থী। ভিয়েতনাম ও লাউসেও রয়েছে কয়েক হাজার শরণার্থী। এমনকি ভিন্ন মতের বুড্ডিস্ট রাজনীতিকরাও শরণার্থী হয়েছে জান্তার নির্যাতনে। আবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শরণার্থীর মত আছে আরো ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। যারা রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে বা আকিয়াবের আইডিপি ক্যাম্পে আছে। মিয়ানমারে দীর্ঘ প্রায় ছয়–সাত দশক ধরে চলা সামরিক শাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে দেশত্যাগকারী মানুষের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। যারা প্রতিবেশী বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পরবর্তীতে স্থায়ী নাগরিক হয়ে ওসব দেশের বোঝা বাড়িয়েছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর মোস্তাক আহমদ বলেন, হাজার হাজার বছর ধরে স্বাধীন থাকা আরাকান (বর্তমানে বার্মার রাখাইন রাজ্য) ১৭৮৫ সালে বর্মীরা দখল করে নেয়। মূলত এরপর থেকেই থেকে মুসলিম ও বুড্ডিস্টরা বাংলাদেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। আরকানে মুসলিমরা হাজার বছর ধরে বাস করছে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি হয়েছিল আরাকান রাজসভাতেই। সেখানকার রাজকবি ছিলেন মুসলিমরা। সেই দেশ দখলের পর শরণার্থীদের যে স্রোত তৈরি হয়, তা এখনও অব্যাহত আছে। কিন্তু গত প্রায় ৭ দশক ধরে মূলত রোহিঙ্গা মুসলিমরাই এদেশে আসছে।

প্রতিবেশী সকল দেশই মিয়ানমারের শরণার্থী বহন করছে উল্লেখ করে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. সলিমউল্লাহ খান বলেন, ‘মিয়ানমার এখনও একটি রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারেনি। বলা যায়, এটি একটি শরণার্থী তৈরির কারখানা।’