ইমাম খাইর, সিবিএন:
সরকার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া উচিত। এতে সম্মিলিতভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা সম্ভব হবে।

বুধবার সকালে উখিয়ার বালুখালীতে ত্রাণ বিতরণের সময় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

এ সময় বিভিন্ন ক্যাম্পে ত্রাণ, নগদ অর্থ বিতরণ ও নলকূপ স্থাপন উদ্বোধন করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা দেশের মধ্যে কোনো রাজনীতি করতে চাই না। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা লোক দেখানো ত্রাণের কাজ করছেন, তারা সরকারি ত্রাণ ব্যবহার করছেন। তবে আমরা যতটুকু সম্ভব ত্রাণ দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনায় সেনা বাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা একদিন কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমনে এসে, লোক দেখানো ত্রাণের কাজ করেছে। তারা সরকারি ত্রাণ বিতরণ করে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করেছে।

বিএনপি এ নেতা বলেন, আমরা নিজ দল থেকে এই সংকটে যতটুকু সম্ভব ত্রাণ দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।  এখন পর্যন্ত যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তার বেশির ভাগ বিএনপি দিয়েছে।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের সব মতের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াস নিতে সরকারের কাছে আবারো আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন- সরকার যদি আন্তরিক হয় তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুব কঠিন কাজ হবে না।

সরকারকে ব্যাপক কুটনৈতিক তৎপরতা চালানোর আহবান জানিয়ে বলেন- বিশ্বের সব শক্তিকে সাথে নিয়ে এমন উদ্যোগ নিতে হবে যেন রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে তাদের নিজদেশে ফেরত যেতে পারে। তিনি বলেন, গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে মিয়ানমার লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত হেনেছে।

ত্রাণ বিতরণের শুরুতে তিনি উখিয়া কলেজ মাঠে সেনাবাহিনীর সাথে দেখা করে তাদের কাছে দুই ট্রাক ত্রাণ হস্তান্তর করেন। পরে তিনি উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীর বাগঘোনায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকা ত্রিপলসহ ত্রাণ বিতরণ করেন।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন- মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা এবং নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আজ সীমান্ত পার হয়ে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় মানুষের জন্য বটেই, সমগ্র মানুষের জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমার সরকার এভাবে তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হেনেছে বলে আমরা মনে করি।

রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সীমিত সাধ্যের মধ্যে প্রথম থেকেই চেষ্টা করছি এই দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা ত্রাণ কমিটি করেছি। সেইলক্ষে ত্রাণ দেয়ার জন্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান ২২ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে কক্সবাজার এসেছিলেন কিন্তু সরকার তাদের ত্রাণ বিতরণ করতে দেয়নি। তবুও আমারা ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া চালু রেখেছি। কক্সবাজারসহ সারাদেশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ত্রাণ নিয়ে দুস্থ রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা কয়েকটি পয়েন্টে নগদ অর্থসহ ত্রাণ বিতরণ করেছি। চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেছি।

এর আগে বিএনপি হাইপ্রোটিন বিস্কিট, চিড়া, ঔষধ নিয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করে আসছে। আজও আমরা সেনাবাহিনীর কাছে আমরা দুই ট্রাক ত্রাণ দিয়ে এসেছি। আমরা মনে করছি এখানে টিউবওয়েল, লেট্রিন আরো তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। বিএনপি নিরবেই এসব করে চলেছে এবং আমাদের এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ত্রাণ টিমগুলোকে সমন্বয় করার জন্য কক্সবাজারে কন্ট্রোল রুম করেছি। এই কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সমন্বিত প্রক্রিয়ায় ত্রাণের ব্যবস্থা আমরা করে চলেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এখানে এসে দেখলাম- সরকার একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই দুঃস্থ মানুষগুলোকে একটা শেল্টার দেওয়া এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি।

ত্রাণ বিতরণকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ,  প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস ইউং এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান, জেলা বিএনপির  সিনিয়র সহ-সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসুচি সমন্বয়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার বিমানযোগে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব।

বিকালে কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বক্তব্য রাখেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর।