ডেস্ক নিউজ:
মনিটরিং না থাকার সুযোগে নিজেদের খুশিমতো দামে পণ্য বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। অস্থির হয়ে ওঠা চালের বাজারে গত কয়েক দিনে পাইকারি দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনে মোটা চাল। গত চার-পাঁচ দিনে এই মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ছয় টাকা পর্যন্ত কমলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা কমিয়েছে মাত্র দু-তিন টাকা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, দেশে খুচরা বিক্রেতাদের মনিটর করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা ইচ্ছামতো দামে পণ্য বিক্রি করে। পাইকারি বা বড় ব্যবসায়ীরা চালের দামের ওঠানামা দ্রুত সমন্বয় করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা এটা করে না। তারা নানা অজুহাতে বেশি দামেই পণ্য বিক্রি করে। দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দেয়; কিন্তু কমলে সেটা সমন্বয় করতে অনেক সময় নেয়। খুচরা বিক্রেতাদের ওপর বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদারকি বাড়াতে পারলে এ সমস্যা অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

রাজধানীর কৃষি মার্কেটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক মন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত এলে বা বাজারের কোনো পণ্যের দাম কমলে আমরা সেটা সঙ্গে সঙ্গেই সমন্বয় করি। বেশির ভাগ সময়ই সেটা এক দিনের বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে না।

কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা তা করে না। দাম বাড়লে তারা এক দিনেই বাড়িয়ে দেয়; কিন্তু কমলে বলে, আগের বেশি দামে কেনা পণ্য কম দামে বেচা যাবে না। ’
মনিরুল হক মন্টু আরো বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে বড় ব্যবসায়ীদের ওপর যেভাবে সরকার মনিটর করে, ঠিক সেভাবেই খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপরও মনিটর করা প্রয়োজন। তাহলে ক্রেতারা সুফল পাবে। ’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজান মাসে সবাই মিলে বাজার মনিটর করে। কারণ সে সময়টাতে পণ্যমূল্যের ওঠানামা থাকে বেশি। তবে এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই কারোরই কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। এর সুযোগ নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এর কারণ হলো তাদের ওপর কোনো ধরনের মনিটরিং নেই। যদি থাকত, তাহলে হয়তো চালের পাইকারি দাম কমার সুফলটা দ্রুতই মানুষের কাছে পৌঁছত। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সব সময়ের জন্য বাজারে মনিটরিংটা থাকুক। এতে কাজ হয়। অনেকে ভয়ে থাকে। দ্রব্যমূল্যটাও কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। ’

হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতাদের ওপর কারো কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওরাও যা খুশি করছে। ’

পাইকারি বাজারের তথ্য মতে, গতকাল রবিবার পর্যন্ত মোটা চালের দাম কমেছে কেজিতে ছয় টাকা। কিন্তু রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে। অনেক দোকানি ৫০ টাকা দরেও এখনো মোটা চাল বিক্রি করছে। কলাবাগানের খুচরা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন গতকাল মোটা চাল বিক্রি করেন ৪৮ টাকা কেজি দরে। কিন্তু পাশের মুদি দোকান সামিয়া ট্রেডার্সে একই রকম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এখনো বেশি দামে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে দোকানি বলেন, ‘বেশি দামে কেনা চাল এখনো শেষ হয়নি। নতুন চাল আনলে তখন দাম কম রাখতে পারব। ’

ফকিরাপুল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম মোটা চাল বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি ৪৬-৪৭ টাকায়। তিনি বলেন, ‘আমি বেশি লাভ করি না। কেনা দামের চেয়ে তিন-চার টাকা বেশিতে চাল বিক্রি করছি। ’

খুচরা বাজারের তথ্য মতে, বিভিন্ন প্রকারের চিকন চালের দাম কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা কমেছে। তবে পাইজাম চাল কেজিতে দু-তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে। এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকা দরে, যা কয়েক দিন আগেও ৫৮ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। আবার একটু ভালো মানের পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৬০ টাকা।