মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দ্রুত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে শনিবার থেকে সেনাবাহিনী পুরোদমে কাজ শুরু করেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় দুযোর্গকালীন মানবিক সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীকে সংযুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে সেনাবাহিনী প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। শনিবার থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয় তাদের। তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসনে কাজ করছেন।

রোহিঙ্গাদের সহায়তা কাজে সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছেন রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন।

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্দেশক্রমে শনিবার থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার থেকে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৮টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তিনটি ধাপে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। প্রাথমিকভাবে তারা সব উৎস থেকে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ ও নির্দিষ্ট স্থানে গুদামজাত করছে। পরবর্তীতে ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেট করে গুদাম থেকে বিভিন্ন বিতরণ স্থানে পরিবহন করা হচ্ছে। সর্বশেষে তালিকা অনুযায়ী সমভাবে দুর্গত রোহিঙ্গাদের মাঝে তা বিতরণ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কল্পে ও সেনাবাহিনীকে মাস্টারপ্ল্যান ও ডিজাইনসহ অন্যান্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দ্রুত এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে আশ্রয় কেন্দ্রসমূহ নির্মাণকাজ শুরু হবে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ও রোহিঙ্গাদের মাঝে চিকিৎসা কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।

সড়কে গাড়ি থামিয়ে কোন ধরনের ত্রাণ বিতরণ না করার নির্শনা দিয়ে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে গঠিত টিম এবং সেনাবাহিনী বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছে।

এছাড়া অহেতুক রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে যাতে গাড়ি নিয়ে কিংবা জটলা নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেই বিষয়টিও মনিটরিং করছে সেনাবাহিনী। উখিয়া কলেজ গেটের সামনে দিয়ে গাড়ি প্রবেশের সময় বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের জিজ্ঞাসা ও তল্লাশির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সড়কে যানবাহন চলাচল যাতে সুশৃঙ্খল থাকে সেই ব্যবস্থাপনায়ও পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যদের দেখা গেছে। এই অবস্থায় বড় ধরনের শৃঙ্খলা ফিরেছে ত্রাণদাতাদের কার্ক্রমে।

রোববার ভোর থেকে উখিয়া কলেজ মাঠে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প এবং কুতপালং এলাকায় জেলা প্রশাসনের ত্রাণ সংগ্রহ কেন্দ্রে গিয়ে শৃঙ্খলার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সেনা সদস্যরা ত্রাণ সংগ্রহের বুথে সরাসরি ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। কলেজ মাঠে ত্রাণবাহী গাড়ি এলে সেটি রাখা হচ্ছে। তারপর বুথে এসে কে ত্রাণ পাঠিয়েছেন অথবা নিয়ে এসেছেন তার নাম এন্ট্রি করতে হচ্ছে। সংগঠন হলে সেটাও এন্ট্রি করতে হচ্ছে। তিনটি তাবু খাঁটিয়ে তৈরি অস্থায়ী গুদামে ত্রাণগুলো মজুদ করা হচ্ছে। আর যারা নিজেরাই রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণে ইচ্ছুক তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ কেন্দ্রে।