ইমাম খাইর, সিবিএন:
রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফেরাতে শনিবার থেকে সেনা বাহিনী দায়িত্ব নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইন।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এত বড় একটা কাজে শৃঙ্খলা আনতে সেনা বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার দাবী ওঠে। দুর্যোগকালীন সময়ে মানবিক দিক বিবেচনায় সেনা বাহিনী দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৭০ কিলোমিটার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পথ। রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে সহায়তা দিচ্ছি। ত্রাণ বিতরণের জন্য ১২ পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এ জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও শৃঙ্খলতায় ত্রাণ বিতরণে শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু সেনাবাহিনী। জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২২টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, আশ্রয়স্থান নির্মাণ, ক্যাম্পের সড়ক সংস্কার, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত খাবার দেয়াসহ নানা তৎপরতা বিদ্যামান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে উখিয়া-টেকনাফে ১২টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানেই তারা সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। পুরো দেশের মানুষ তাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে আসছে। এছাড়া দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থাও সাহায্য পাঠিয়েছে। আরো নানা স্থান থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কুতুপালংয়ে কন্ট্রোল রুম খুলেছে জেলা প্রশাসন। সেখান থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের বাইরে গিয়ে কেউ ত্রাণ বিতরণ দিতে পারবে না। যারা নিয়ম না মেনে ত্রাণ দিবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশের মতো এতো শরনার্থী পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। বিপুল পরিমাণ শরনার্থীদের আশ্রয়, মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব মাঝে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রশংসা কুঁড়িয়েছে বিশ্ব নেতাসহ আন্তর্জাতিক মহলে। কেউ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারীও করা হচ্ছে। কোন জঙ্গী সংগঠনের সাথে রোহিঙ্গাদের যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের নজরে এ পর্যন্ত এরকম কোন বিষয় চোখে পড়েনি। মিয়ানমারেই রয়েছে বিদ্রোহী ও জঙ্গী সংগঠন আরসা’র কার্যক্রম। বাংলাদেশে এই সংগঠনের অস্থিত্ব নেই।

পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ একাধিক বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফে ২২টি মোবাইল টিম মাঠে রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ১১টি পুলিশ চৌকি বসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত পালিয়ে যাওয়ার সময় ৫ হাজার ১১৯ জন রোহিঙ্গাকে বালুখালীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ২১২ জন দালালকে সাজা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সব বিষয় তদারকিতে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এখানে রোহিঙ্গাদের যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।

তিনি অন্য জেলা বা শহরে রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া বা আশ্রয় না দিতে সকলের প্রতি আহবান জানান। শরানার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোঃ আবুল কালাম জানান, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসেন বালুখালীতে ২ হাজার একর জায়গায় ১৪ হাজার শেড নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। নির্মাণ কাজ শেষ হলে সাময়িকভাবে বর্তমানে আশ্রয়ে থাকা স্থান থেকে সকল রোহিঙ্গাদের বালুখালীতে আনা হবে। মিয়ানমার ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই তারা বসবাস করবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোঃ আশরাফুল আলম খোকন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মোঃ আবদুর রহমান ও জেলা তথ্য অফিসার মোঃ নাছির উদ্দিন।