এম.মনছুর আলম, চকরিয়া:
চকরিয়ায় কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার।এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেপরোয়া ভাবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সব ধরনের চাল প্রতি কেজিতে প্রায় ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি করায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে না থাকায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।তবে চালের এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেনা বলে কয়েকজন ক্ষুদ্র চাল বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।সরকারের পক্ষথেকে চাল মজুতদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও প্রতিদিনই চকরিয়ায় বাড়ছে এ চালের দাম।বিপুল পরিমাণ চাল প্রতিটি দোকানে মজুদ থাকার পরও দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।মিনিকেট চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা, মোটা চাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫থেকে ৪০টাকায়। এতে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ চাল ক্রয় করতে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন।
পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, মিল মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে এ চালের দাম রাতারাতি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া এখন মোবাইলের মাধ্যমে ঘণ্টায়-ঘণ্টায় চালের দাম পরিবর্তন করছেন বড় চাল ব্যবসায়ীরা।ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এ চাউলের বাজার বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
উপজেলার একাধিক বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখাযায়, বদরখালী বাজার, ইলিশিয়া বাজার, চকরিয়া পৌরশহর,ডুলাহাজারা,খুটাখালী বিএমচর, কোনাখালী, হারবাং ও বরইতলীসহ বিভিন্ন বাজারে মিনিকেট চাল প্রতিকেজি বিক্রি হতো ৫২টাকা কেজিতে এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০টাকা বা তারও উপরে।মোটা চাল বিক্রি হতো ৪০-৪২টাকা কেজিতে এখন সেই চাল কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫থেকে ৮টাকা। আবার চালের দামের ক্ষেত্রে এক একটি এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন দামে পাওয়া গেছে চালের দাম। এ নিয়ে কোন ব্যবসায়ীরা সদুত্তর দিতে পারছে না।চালের এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, এটা চালের মিল ও আড়তদারদের এক ধরণের কারসাজি।আবার অনেকে বলেছেন,অতিবৃষ্টি, বন্যা ও রোহিঙ্গা ইস্যুর জন্য চাউল আমদানী জটিলতাকেও দায়ী করছে।
বিক্রেতারা জানান,মুলত বড় বড় চাউল ব্যবসী ও আড়তদার বাজারের চাউলের দামটা বাড়িয়েছে, সে কারণে খুচরা বাজারে এ সব চালের দাম বেড়েছে। মিল মালিকরাও চাল ছাড়ছে না, তাই বাজারে চালের সরবরাহ কম। এছাড়া বাজারে প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ী মহল।
বদরখালী বাজারের চাল ব্যবসায়ী ছৈয়দ নুর সওদাগরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,চালের মোকাম থেকে আমরা যে দামে চাউল ক্রয় করি এর সঙ্গে কিছু মুনাফা যুক্ত করে খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকি।এখানে কোন ধরণের কারসাজি নেই। কারসাজি যদি হয়ে থাকে তাহলে তা মিলাররা করে থাকেন। তিনি বলেন, আমদানিকারক ও মিলারদের কারসাজিতে চালের দাম হু হু করে বাড়ছে।তাদের নিজস্ব গুদামে চালের অবৈধ মজুদ রাখেন।তা ছাড়া চকরিয়া পৌরশহরেরর মধ্যে অধিকাংশ বড় বড় ব্যবসায়ী চাউল মজুদ রেখে খোলা বাজারে ছাড়ছেনা।বড় দোকানের গোডাউনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালালে তা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে খুটাখালী বাজারের ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী নুর আহমদ বলেন,বর্তমানে বেসামাল অবস্থা চাউলের বাজার। দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। চাল নিয়ে এই চালবাজির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে।একমাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও এক সপ্তাহে মধ্যে বেড়েছে কেজিতে কমপক্ষে ৫ টাকা। যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে অস্বাভাবিক। এমন দাম বৃদ্ধির কারণে বিস্মিত হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
বিএমচর বহদ্দার কাটা এলাকার রিক্সা চালক নুরু ও দিন মজুর নুরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন,দিন দিন চাউলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের মত শ্রমিকের মোটা চাউল ক্রয় করাও নাগালের বাহিরে চলে গেছে।এ ভাবে চালের বাজার অস্থিরতা থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিসহ হয়ে পড়বে।এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের জরুরী ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে তারা জানায়।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাহেদুল ইসলাম বলেন,চাউলের মূল্যবৃদ্ধি ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।যদি ন্যয্যা মূল্যের চেয়ে কেউ অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।