হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ৩১ বিজিবির আওতাধীন চাকঢালা বর্ডার অবজারভেশন পোষ্ট (বিওপি) সংলগ্ন বড়ছড়া কালভার্ট ধসে- রেড ক্রিসেন্টের দেয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণবাহী ট্রাক (চট্টমেট্রো ট ১১-০৫৮৫) উল্টে গিয়ে প্রাণ হারানো- নয়জনের মধ্যে আটজনের জানাজা নামাজ একই মাঠে সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলা সদরের ঈদগাঁহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আটজনের জানাজা। জানাজায় ইমামতি করেন নাইক্ষ্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা সৈয়দ হোসেন। তিনি বলেন, জীবনে প্রথম একসঙ্গে আটজনের জানাজা পড়ালাম। এটা নাইক্ষ্যংছড়ির ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

মারমা পাড়ায় অপরজনের শৎকার অনুষ্ঠান হয়। সকাল আটটার দুর্ঘটনায় তাঁরা প্রাণ হারান। একসঙ্গে এমন মৃত্যু দেখেনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষ। ফলে নিহতদের আহাজারি ও বিলাপে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। চলছে স্বজনহারাদের মাতম। নয়জনের মৃত্যু এবং অসংখ্য আহতের ঘটনায় পুরো উপজেলা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে।

নিহতরা হলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির ছালামিপাড়ার মো.হানিফের ছেলে আবদুল্লাহ (১৮), নূর আহমদের ছেলে ছুরুত আলম (৩৫), বদিউল আলমের ছেলে ছৈয়দুল আমিন (২৬), বাগানঘোনার মৃত আবুল কালামের ছেলে জলিল আহমদ (৪০), ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৬), ঘিলাতলীর গোলাম হোসেনের ছেলে মামুনুল হাকিম (১৭), ঠান্ডাঝিরির মোক্তার আহমদের ছেলে আবদুল মাবুদ (৪০), সোলাইমানের ছেলে সুলতান আহমদ (৫৪) ও বড়–য়া পাড়ার অন্তু বড়–য়ার ছেলে সুদর্শন বড়–য়া (৪৫)। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছয় জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তিন জন প্রাণ হারান। আহত ১২ জনের মধ্যে ঠান্ডাঝিরির মো.সেলিমের ছেলে আজিজুর রহমানের (৩৫) অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বাকিরা নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত এবং আহতরা সবাই স্থানীয়ভাবে শ্রমিকের কাজ করেন। ঘটনার পর পর ট্রাকের চালকের খোঁজ নেই।

এদিকে নিহত ও আহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে একদিনের ব্যবধানে সূদূর ঢাকা থেকে নাইক্ষ্যংছড়িতে ছুটে আসেন-পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। বিকেলে তাঁদেরকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি বীর বাহাদুর উশৈসিং তাঁর পক্ষ থেকে ১০ হাজার, বান্দরবান জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে প্রত্যেক নিহত পরিবারকে সর্বমোট ৩০ হাজার এবং ২০ কেজি করে চাউলের পাশাপাশি আহতদেরকে ১০ হাজার টাকা এবং ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুর্ঘটনার খবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে পেরেছেন। তিনিও শোক প্রকাশ করেছেন। সবার মনকে শক্ত করতে হবে। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।’

সদর ইউপি কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠানে বান্দরবান জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যসাপ্রু মার্মা, জেলা প্রশাসক (ডিসি) দীলিপ কুমার বণিক, ৩১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল মো.আনোয়ারুল আযীম, জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গির, জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষিপদ দাশ, মোজাম্মেল হক বাহাদুর, ক্যউচিং চাক, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো.কামাল উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম সরওয়ার কামাল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম তৌহিদ কবির, সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরীসহ পদস্থ কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।