নুরুল কবীর, বান্দরবান:
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সাতটি পয়েন্টে ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে পর্যায়ক্রমে উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক এ তথ্য জানিয়েছেন। গত তিনদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুনধুম ও তমব্রু সীমান্ত দিয়ে কোনো রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ইউএনও এসএম সারোয়ার কামাল বলেন, সোমবার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে ২ হাজার ৫০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, বড়সনখোলায় ১ হাজার ৫০০ পরিবার, শাপমারা ঝিরিতে ৪০০ পরিবার, ফুলতলীতে ৭৩ পরিবার, পাহাড়পাড়াতে ৮০০ পরিবারকে নিবন্ধিত করা হয়েছে। অনিবন্ধিত রয়েছে পাহাড়পাড়ার ৪ হাজার পরিবার, কোনাপাড়ায় ১ হাজার ৪০০ পরিবার, পশ্চিমকুলে ১ হাজার পরিবারসহ আরো পরিবার রয়েছে যাদের এখনো নিবন্ধন করা হয়নি। এরাও শিঘ্রই নিবন্ধনের আওতায় আসবে। নিবন্ধনকৃত ও অনিবন্ধিতদের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে পর্যায়ক্রমে পার্শ¦বর্তী উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক ছাড়াও বান্দরবান সেনা রিজিয়নের মেজর শফিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মাকসুদ,ভারপ্রাপ্ত সিভিল সাজন ডা: অংশৈ প্রুসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় নেয়া ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী পরিবারের মধ্যে মঙ্গলবার ৫০০ পরিবারকে উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার আগে গত সোমবার ২ হাজার ৫০০ পরিবারকে বালুখালি ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকীদের বালুখালি ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়া হবে জানা গেছে। গত তিনদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ রয়েছে জানিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া ত্রাণ বিতরণ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জানান, প্রথম দিকে বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এখন জেলা প্রশাসনের ঘোষিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমেই ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে দুইটি, ঘুনধুমে দুইটি সেন্টার রয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ঘুনধুমে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ত্রাণ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, সদর সার্কেল এসপি চম্পা রাণী, এসপি ইয়াছিন আরাফাত সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রফিক উল্লাহ, ডিবি’র ওসি বাচা মিয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপরের নির্দেশ অনুযায়ী রোহিঙ্গা যাতে বান্দরবানের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই ব্যাপারে সর্তক রয়েছে পুলিশ। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যাতে করে কোনো উগ্রবাদী সংগঠন বা দল বিচ্ছিন্ন ঘটনা সৃষ্টি করতে না পারে এই ব্যাপারেও সাদা পোশাকে সর্তক রয়েছে পুলিশ। এছাড়া আগামী দুর্গাপূজায় ও বৌদ্ধদের ধর্মীয় উৎসব প্রবারণায় যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায় এই ব্যাপারেও সর্তক রয়েছে পুলিশ। এ বছর বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় ২৬টি পূজাম-পে উৎসব উদযাপিত হবে।