হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

বৃষ্টির কারণে উখিয়া-টেকনাফে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা চরম দুর্দশায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। টেকনাফ-উখিয়ায় শনিবার রাত থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আর খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন কয়েক লক্ষ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। বৃষ্টির কারণে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে অভুক্তই থাকতে হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে ভিজে প্রায় রোহিঙ্গা বিশেষতঃ শিশুদের বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টিপাতে রোহিঙ্গা ঝুপড়ির সব কিছুই ভিজে এবং কাদামাটিতে একাকার হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বৃষ্টিতেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্দ থাকেনি। টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। বিশেষ করে বেশী আসছে শাহপরীরদ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে।

ভিজে একাকার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানান সহায়-সম্বল ফেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মৃত্যু, আতংক, গুলি, জবাই, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষন ইত্যাদি উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে পৌঁছতে পেরে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। কিন্ত দুর্গতি যেন আমাদের পিছু ছাড়ছেনা। এখনও মাথা গোঁজার ঠায় হয়নি। অর্ধাহারে অনাহারে সকলেরই কাহিল অবস্থা। তার উপর ইত্যবসরে গত কয়েক দিন ধরে টেকনাফ ও উখিয়ায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিশেষ করে নারী শিশু ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। যারা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তারাও শান্তিতে নেই। বৃষ্টিতে ঝুপড়ি ঘরের সব কিছু ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। পাহাড়ের আঠালো কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায় সব কিছু। ঘরে থাকা কাপড়-চোপড়, ঘুমানোর বিছানাসহ সব কিছু ভিজে এবং কাদামাটিতে একাকার হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ বলেন ‘বহু মানুষ মিয়ানমার থেকে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত অবস্থায় এবং কোন খাদ্য বা পানি ছাড়াই এসে পৌঁছাচ্ছে। এত বেশি সংখ্যক আশ্রয় নিয়েছে সবার খাদ্য, আশ্রয়, খাবার পানি এবং মৌলিক পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারগুলো তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে না পারলে দুর্ভোগ আরও অনেক বাড়বে এবং এতে প্রাণহানি ঘটারও আশংকা রয়েছে’।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সুমন বড়–য়া বলেন ‘অস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মেডিক্যাল কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করা হয়েছে। শিশুদের জন্য বিশেষ ইপিআই কর্মসূচির অধীনে ইপিআই এবং মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া একদিন থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় আনাসহ শিশুদের হাম-রুবেলা টিকা প্রদান এবং পোলিও টিকা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে গেছেন। এসময় তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে মেডিক্যাল টিম স্থাপনসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দেন। তাঁরই নির্দেশনা মোতাবেক ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব বন্টন অনুসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন’।