হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রভাবে টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ায় কয়েক হাজার জেলেদের সাগরে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। এতে জেলে ও বোট মালিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভের পাশাপাশি পোষ্যরা অর্ধ মাস ধরে অনাহার ও অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন জানা গেছে।
২৪ আগষ্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশের চৌকিতে বিদ্রোহী সংগঠন (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) হামলার কারণে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী আরাকান রাজ্যে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি ঘরে আগুন দেয়াসহ নানাবিধ নির্যাতনের কারণে ২৫ আগষ্ট হতে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে এবং সেই দেশে বর্বরতা বন্ধ না হওয়ায় অদ্যাবধি অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে সহিংসতার শুরুর কয়েকদিন কয়েকটি বোট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করিয়েছে বাহারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে।
এই সূত্র ধরে কোস্টগার্ড ও বিজিবি সাগরে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বোট মালিক ও মাঝিরা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সাগরে মাছ শিকার বন্ধ হলে মাঝি, জেলে ও বোট মালিকদের ক্ষতি গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাঁদের মাছ শিকার বন্ধে প্রভাব পড়েছে উপকূলীয়সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোক্তাদের। তাঁরা চাহিদা মতো মাছ না পাওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন। পাশাপাশি জেলে পরিবারের পোষ্যদের মধ্যে চরমভাবে আর্থিক-অনটন চলছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ায় গিয়ে জানা যায়, মিয়ানমারের সহিংস ঘটনার দুই বা তিনদিন ধরে ট্রলারের রোহিঙ্গা মাঝিরা তাঁদের আতœীয় স্বজন মিয়ানমার থেকে এপারে অনুপ্রবেশ করিয়েছিল। কিন্তু বোট মালিকদের অজান্তে। এইসব রোহিঙ্গা মাঝিদের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে বোট মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীদের। বাহারছড়া ইউনিয়নে মাছ শিকারের একাধিক ঘাট রয়েছে। একেকটি ঘাটে কয়েকশ করে ট্রলার বা বোট রয়েছে। এইসব বোট তীরে দেখা গেছে। একটি বোটও সাগরে যায়নি।
বোটের রোহিঙ্গা মাঝি আব্দুস সামাদ, আবদুস শুক্কুর, জমির আহমদ, হায়দর আলী বলেন ‘মিয়ানমার তাদের নাড়ীর দেশ হওয়ায় ওপারে অনেক আতœীয় স্বজন রয়েছে। তাদের প্রাণ বাঁচাতে মালিকের অজান্তে এপারে নিয়ে আসতে বোট ব্যবহার করেন। তবে অনেক বোট মালিক এটি জানতেননা। এখন কোস্টগার্ড ও বিজিবির কড়াকড়িতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সেই সাথে সাগরে মাছ শিকার বন্ধও রয়েছে’।
মাছ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন ‘সাগরে ট্রলার না যাওয়াতে ব্যবসায় বন্ধ রয়েছে। তাদের ক্রয়কৃত মাছ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে আর্থিকভাবে খুবই কষ্টে আছি।
শামলাপুর বোট মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন এবং সেক্রেটারী জাহেদুল আলম বলেন ‘সমিতির অধীনে ১২০টি ফিশিং ট্রলার লয়েছে। আমাদের ফিশিং ট্রলারগুলো যুগ যুগ ধরে সাগরে মাছ শিকারে নিয়োজিত। এ ফিশিং ট্রলারের উপর কয়েক হাজার পোষ্য জীবণ-জীবিকা নির্ভরশীল। কিন্ত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দোহাই দিয়ে সাগরে মাছ শিকার বন্দ রাখা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। মাত্র কয়েকদিন শামলাপুর ঘাট দিয়ে মালিকদের অগোচরে মাঝিদের আতœীয়-স্বজন অনুপ্রবেশ করেছে। এ কারণে পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং করে সম্পুর্ণভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও সাগরে মাছ শিকার বন্দ করে দিয়েছে’।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাহারছড়া ইউনিয়ন অঅওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মাওঃ আজিজ উদ্দিন বলেন ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করায় মাইকিং করে ফিশিং ট্রলারগুলোকে সাগরে নামতে সাময়িকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এতে সাগরে মাছ শিকার বন্দ হয়ে গেছে। সাধারণ জেলে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করে পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনের তদারকিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না করা সাপেক্ষে সাগরে মাছ শিকার অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে’।