মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা

সাইফুল ইসলাম
ছব্বির আহমদ। বয়স (২৫)। বিয়ের বয়স তিন মাস। ২১ দিন পূর্বে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয় ছব্বির। মিয়ানমারে কোন ধরণের চিকিৎসা পায়নি সে। ছোট ও বড় ভাইয়ের কাঁধে করে সাত দিন পাহাড়ের জঙ্গল পাড়ি দিয়ে জিরি পার হয়ে উখিয়া পালংখালী আঞ্জুমান এলাকা পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। উখিয়া পালংখালী আঞ্জুমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আসলেই রাস্তার উপরে প্রায় ২২ দিনের মাথায় প্রাথামিক চিকিৎসা পেয়েছে। কক্সবাজারস্থ ভারুয়াখালী এসোসিয়েশনে মেডিকেল ক্যাম্প চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে প্রাথমিক সেবা পান। অবশেষে চিকিৎসা পেয়ে ওই কাংখিত দীর্ঘ শ্বাস ফেললো ছব্বিরসহ তার দু’ভাই। ছব্বির মিয়ানমারের ভুসিদং মাঝের পাড়ার গোরা মিয়ার ছেলে। ভুসিদং মাঝের পাড়া থেকে দুই ভাইয়ের কাঁধে করে সাত দিন হাটার পরে বাংলাদেশে পৌঁছেন। তার বড় ভাই আব্দুল করিম ছোট ভাই রহিম উল্লাহ। একই এলাকা থেকে তিন মাস পূর্বে রহিমা বেগম নামে এক মহিলাকে বিয়ে করে সে। তিন ভাইসহ তার মা,বাবা, স্ত্রীসহ কোথায় থাকবে জানা নেই। তারা উভয়ে আস্তে আস্তে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার শরীরে সবখানে গুলির দাগ। শরীরের কোন অংশ বাদ পড়েনি। তার দুই ভাইসহ গুলিতে ঝাঁঝরা ভাই নিয়ে কি করবে ভাবছে তারা। সাথে বাংলাদেশে ঢুকার পরে চিকিৎসা সাথে খাবার পেয়ে বড় ও ছোট এবং মুখে একটু হাসি ফুটলো।
ছোট ভাই রহিম উল্লাহ বলেন, সাত ধরে পাহাড়ে শুকনো কিছু খাবার ও পানি ছাড়া ভাত চোখে দেখি নাই। ক্ষুধার যন্ত্রণা সইতে পারছিলামনা। গুলিতে ঝাঝরা ভাইয়ের চোখ থেকে পানি আসতে দেখা গেলে আমাদের চোখের পানিও রাখতে পারছিলাম না। একটু হেটে আবার একটু বসি । মাঝে মধ্যে বসে ক্ষুধার যন্ত্রানায় দুই পেট চেপে ধরি। এভাবে সাত দিন কেটেছে। বাংলাদেশে দুইটি খাবারের প্যাকেট পেয়ে কি যে খুশি হয়েছি তাহা বলার মতো নয়।
বড় ভাই আব্দুল করিমের কাছে জানতে চাইলে বর্ণনা দেন তাদের উপর মিয়ানমারের অমানবিক নির্যাতনের কথা। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ী মিয়ানমারের ভুসিঢং মাঝের পাড়া এলাকায়। আমাদের ঘরবাড়ী জালিয়ে দিয়েছে সরকারী বাহিনী ও রাখাইনরা। অনেক আত্মীয় স্বজনকে গুলি করে ও পুড়িয়ে মেরেছে তারা। এর মধ্যে আমার ছোট ভাইকে গুলি করলো মিয়ানমারের সেনাবাহিনীরা। গুলি খাওয়ার পরে দ্রুত পালিয়ে আসায় প্রাণে বাঁচালো ছব্বির। দীর্ঘ সাত দিন পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে শুক্রবারে এখানে এসেছি। আসা মাত্রই ভাইয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছি। পথের মধ্যে অত্যন্ত যন্ত্রাণার মধ্যে ছিলো ভাই। এরপরেও কোথাও চিকিৎসা পাইনি। কোথায় যাবো, কি খেয়ে বাচঁবো, তা নিয়ে রাস্তার মধ্যে ভাবছেন তারা।